মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পতনমুখী পুঁজিবাজারে মার্জিন ঋণঝুঁকি বাড়ছেই। দিন যত যাচ্ছে, ততই বাজারের সার্বিক অবস্থা নাজুক হচ্ছে। যার জেরে মার্জিণ ঋণঝুঁকি বাড়ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন ভুক্তভোগীরা। লোকসানে থাকার কারণে তারা শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে শোধ করা হচ্ছে না ঋণ। পক্ষান্তরে ঋণের বোঝা আরো ভারী হচ্ছে।
পুঁজিবাজারে পতনের লাগাম টেনে ধরার জন্য গত বছর মার্জিন ঋণের হার বাড়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অল্প দিনের মধ্যে ১:৫০ থেকে বাড়িয়ে ঋণের পরিমাণ ১:১ করেন। বিনিয়োগকারীরা যাতে ঋণ নিয়ে হলেও পুঁজিবাজারে টিকে থাকতে পারেনÑ এ ভাবনা থেকেই বাড়ানো হয় ঋণের পরিমাণ। কিন্তু বাজার পরিস্থিতি মন্দা হওয়ায় হিতে বিপরীত হয়েছে। এখন ঋণ পরিশোধ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন মার্জিন ঋণধারী বিনিয়োগকারীরা।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, এখনো তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্য অনুপাত ৪০-এর বেশি না হওয়া পর্যন্ত যেকোনো সিকিউরিটিজে ১০০ শতাংশ হারে মার্জিন ঋণ পাচ্ছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কখনো কখনো মার্জিন ঋণের কারণে বাজারে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন হয়। ফলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও পুঁজিবাজারের মানও ক্ষুণœ হয়। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে মার্জিন ঋণ পরিহার করা উচিত।
তাহলে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়বে, কমবে কারসাজি। ২০১০ সালের পর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনেও পুঁজিবাজারে ধসের পেছনে মার্জিন ঋণকে দায়ী করা হয়। সেখানে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ পরিহারের সুপারিশও করা হয়। এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, আমি বার বারই বলি যত দূর সম্ভব ঋণ না করেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত।
পুঁজিবাজারে ঝুঁকি থাকবেই। ঋণ না করে সঞ্চিত অর্থ থেকে বিনিয়োগ করা ভালো। যারা মার্জিন লোন নেন, তারা লোভে পড়ে নেন। দরপতনে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিনিয়োগকারীরা বলেন, বাজার ভালো হবে এ আশায় ঋণ নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি এর উল্টো পরিস্থিতি। বাজার ভালো নেই। প্রতিদিন লোকসানের হিসাব কষতে হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে ঋণের বোঝা। সব মিলে আমাদের অবস্থা নাজুক। বাজারে এ পরিস্থিতি আরো কিছুদিন থাকলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপাই থাকবে না।
তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে ৩৪ লাখ বেনিফিশিয়ারি ওনার্সধারী (বিও) বিনিয়োগকারীর মধ্যে মার্জিন ঋণ নেয়াদের নেগেটিভ ইক্যুইটি ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা। একের পর এক সুবিধা দিয়ে যা গত ১২ বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা কমে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউসগুলো এখনও সেই লসের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
ফলে যখনই দরপতন হয়, তখনই এ মার্জিন ঋণ দেয়া ব্রোকার হাউসগুলো শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুল নেয়। এতে দরপতন প্রলম্বিত হয়। বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত পুঁজি হারান। এদিকে মার্জিন ঋণ না দিলে অনেক বিনিয়োগকারী হাউস পরিবর্তন করেন। যে কারণে বাধ্য হয়েই হাউস মালিকরা লোন দেন।
নাম প্রকাশ না করার একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯-১০ সালের দিকে মার্জিন ঋণ না দিলে হাউসে বিনিয়োগকারীরা থাকত না। অন্য হাউসে চলে যেত। তখন তাদের মার্জিন ঋণ দিতে হয়েছে। ২০১০ সালের ধসে এর মাশুল দিয়েছেন তারা। তবে এ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন খুব বিনিয়োগকারী। এখনো কিছু বিনিয়োগকারীর এমন মনোভাব রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি মার্জিন ঋণ ভালো নয়। আমি ঋণের বিপক্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন লোক ৫০ হাজার কিংবা ১ লাখ টাকা আনল। তাকে পর দিন লোন দিয়ে দিলেন, এটা ঠিক নয়। তার ক্যাপাসিটি আছে কিনা, দেখতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকলে তাকে লোন দেয়া বন্ধ করতে হবে।
কেউ যদি এ জাতীয় লোন দেন, অবশ্যই ক্লায়েন্ট বুঝে দিতে হবে। অপশন আছে বলেই যে লোন দিতে হবে, তা করা যাবে না। লোনের রেশিও কম হওয়া উচিত।’
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য