-->

২০২৩ সালে বিনিয়োগবান্ধব পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
২০২৩ সালে বিনিয়োগবান্ধব পুঁজিবাজারের প্রত্যাশা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে স্মরণকালের বড় ধস হয় ২০১০ সালে। শতভাগ অতিমূল্যায়িত শেয়ারে বিনিয়োগ করে তখন পথে বসেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। বিক্ষোভে উত্তাল হয় ঢাকার রাজপথ। পুঁজি হারিয়ে আত্মহত্যা করে সংবাদের শিরোনাম হন যুবরাজ, রনি জামানের মতো বিনিয়োগকারীরা। বাজারের লাগাম টেনে ধরার পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের নানান সুবিধা দিতে এগিয়ে আসে সরকার।

 

কিন্তু ফল খুব একটা শুভ হয়নি। ধসের ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্ষত শুকায়নি বিনিয়োগকারীদের। কিছু বিনিয়োগকারীর পুরোনো লোকসানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন লোকসান। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও এ লোকসান থেকে বের হতে পারছেন না তারা। ২০২৩ সালে এই ক্ষত শুকাবে এমন প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের।

 

অন্যান্য বছরের মতো বিদায়ী বছরেও পতনের কবলে আবদ্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বছরের বেশিরভাগ সময় ছিল লাগাতার পতন। সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্তে¡ও দীর্ঘমেয়াদিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। কয়েকবার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত আবারো পতনে ফিরে গেছে, যার জের ধরে বছরজুড়েই লোকসানের হিসাব করতে হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।

 

গত বছরের শুরুর দিকে করোনা মহামারিতে বিধ্বস্ত বিশ্ব যখন ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার প্রত্যাশা করছিল, তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সেই গতি মন্থর করে দেয়। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত শুরুর পর থেকেই অস্থিরতা দেখা দেয় বিশ্বের পুঁজিবাজারে, যার রেস পড়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। একইভাবে বিভিন্ন কারণে বাজারচিত্র পাল্টে যেতে থাকে। কমতে থাকে লেনদেন। টানা দরপতনে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তেমন ফল পাওয়া যায়নি।

 

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বলেন, এ বছর তারা একটি বিনিয়োগকারীবান্ধব পুঁজিবাজার চান। কারণ বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই এখন লোকসানে রয়েছেন। এ বছর যদি এমন থাকে, তাহলে তাদের লোকসান আরো ভারী হবে। এতে তাদের আর্থিক অবস্থা আরো করুণ হবে।

 

জানতে চাইলে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতিবছরই আমরা চাই নতুন বছর ভালো যাক। এবারো তেমন প্রত্যাশা থাকবে। এখন যারা বাজারে বিনিয়োগ করছেন বা যাদের পূর্বে বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের বেশিরভাগই লোকসানে রয়েছে। তাই এ বছর বাজার ভালো থাকা জরুরি। বাজার যেন কোনো সিন্ডিকেটের আন্ডারে চলে না যায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর প্রত্যাশা করছি।

 

২০২২ সালের শুরুটা দুর্দান্ত পার করলেও শেষের দিকটা ভালো যায়নি বিনিয়োগকারীদের জন্য। এই সালের প্রথম সপ্তাহ থেকে বেশ চাঙ্গা ছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু শেষদিকে এসে অনেকটা টানা পতনের মধ্য দিয়ে পার করেছে। ফলে বছরের প্রথমার্ধ ভালোভাবে পার করলেও শেষদিকে হতাশার মধ্যেই কেটেছে বিনিয়োগকারীদের। হতাশা থেকে বিনিয়োগকারীদের বের করে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিভিন্ন কাজ করে চলছে। কিন্তু তেমন ফল আসেনি।

 

সংশ্লিষ্টরা নতুন বছরে একটি স্থিতিশীল, আস্থাশীল, বিনিয়োগবান্ধব পুজিবাজার দেখতে পাবে সেই প্রত্যাশা করছেন। আশা করছি, ডলার সংকট, বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বড় বড় সমস্যা কেটে গেলেই পুঁজিবাজারে আরো গতিশীল হবে। তাই নতুন বছরে পুঁজিবাজার আরো আস্থাশীল ও গতিশীল হবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি আস্তে আস্তে ফিরে পাবে।

 

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, হয়তো বাজার কিছুটা খারাপ। তবে এর অন্যতম কারণও সবাই জানি। বিশেষ করে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা, ডলার সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বেশ কিছু সমস্যা একই সময় হওয়ায় পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে এটা হয়তো দীর্ঘায়িত হবে না।

 

কমিশনের নেয়া পদক্ষেপগুলো এখন সুফল পাচ্ছে না ঠিক, তবে একটু সময় দিলে আশা করা যায় সবগুলো সিদ্ধান্তই কার্যকরী হয়ে উঠবে। কারণ যেকোনো সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক না হয়ে সময়সাপেক্ষে হলেও তা ফলপ্রসূ হয়ে থাকে। তাই আমরা আশা করছি ২০২৩ সালের শুরু থেকেই যে সমস্যাগুলো বাজারে বিদ্যমান, সেগুলো কেটে যাবে এবং আমরা একটি সুন্দর ও ভালো পুঁজিবাজার দেখতে পাব।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এখন বিনিয়োগের অবস্থায় রয়েছে প্রায় সব শেয়ার। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর গড় শেয়ারপ্রতি মূল্য আয় অনুপাত ১৫-এর কম। বর্তমানে খাতভিত্তিক পিই রেশিও বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের পিই রেশিও অবস্থান করছে আট দশমিক চার পয়েন্টে, ব্যাকরণগতভাবে যা বিনিয়োগের সবুজ সংকেত বহন করে। কারণ ২০-এর নিচে পিই থাকলে সে কোম্পানিকে বিনিয়োগের উপযোগী ভাবা হয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজার যে অবস্থায় রয়েছে, এ অবস্থায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানো উচিত। তবে বিনিয়োগকারীদের সর্তক হয়ে বিনিয়োগ করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

 

মন্তব্য

Beta version