সুশীল সরকার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): ঢাকা আন্তর্জাতিক বানিজ্যমেলার ষষ্ঠ ও সপ্তম দিনে দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
এই মেলার ২৭ তম আসর বসেছে পূর্বাচল উপ-শহরের ৪ নম্বর সেক্টরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে।
শুরুর ৫ দিন তেমন একটা মেলা না জমলেও প্রথম ছুটির দিন শুক্রবার বিকেল থেকে জমে উঠেছে বানিজ্য মেলা। গতবারের চেয়ে এবারে আরো বেশি জাকজমকপূর্ণভাবে সাজিয়েছে ইপিবি কর্তৃপক্ষ। এর আগে ১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন দর্শনার্থী ও ক্রেতারা। এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কে প্রায় ১২ কিলোমিটার যানজট দেখা গেছে। যানজট পেরিয়েও দর্শনার্থীরা আসছে মেলায়। যানজট পুরোপুরি নিরসন করতে না পারলে লোক সমাগম কমে যাবে , লোকসানের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য প্রশাসনের প্রতি ব্যবসায়ীদের আহ্বান যাতে যানজট মুক্ত রাখা হয় এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কটি। যানজট নিরসন করতে পুলিশ প্রশাসন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরেই দেশে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্য প্রবাহের কারণে দেখা দেয় মাত্রাতিরিক্ত শীত। শীতের কারণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আগমণ কম। তা না হলে এই সময়ে আরো বেশি সমাগম হত বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গত বছর বানিজ্য মেলার ২৬তম আসরে মোট ২২৫ টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হলেও এ বছর দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট ৩৩১ টি। যার মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে প্যাভিলিয়ন রয়েছে মোট ৫৭ টি। এবারের মেলায় ভারত, পাকিস্তান, হংক, তুর্কিসহ অন্তত ১২ টি দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা অংশ নিয়েছেন।
এ বছর মেট্রোরেলের আদলে করা হয়েছে বানিজ্যমেলার প্রধান ফটক । এই আসরে মেলার আয়তনও বাড়ানো হয়েছে অনেকটা। বানিজ্যমেলার ২৭ তম আসর সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি কঠোরভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মেলায় প্রবেশ ফি প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা, শিশুদের ২০ টাকা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ফ্রি। নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মেলার প্রতিটি অংশে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলার ৬ষ্ঠ দিনে শুক্রবার দুপুরের পর থেকে মেলায় বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ও ক্রেতা আসতে থাকে। স্টলগুলোতে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ বাতির রঙ্গিন আভায় জাঁকজমক পরিবেশ বিরাজ করে। ক্রেতা টানতে স্টলগুলো সাজ-সজ্জায় কমতি রাখেনি কেউ। স্টলগুলোর কর্মচারীরা সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে নিজেদের পন্য সম্পর্কে জানিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্টের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মেলায় দর্শনার্থীদের মাঝে সবচেয়ে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শীতের কাপড়, গৃহস্থালীর পন্য ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর দোকানে। এছাড়া মেলায় এই প্রথম শিশুপার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিশুপার্কটিতে ফ্লিপার, ওয়াটারবকল, নাগরদোলা, নৌকা, ট্রেনসহ বিভিন্ন রাইড রয়েছে। যেখানে অভিভাবকরা শিশুপার্কে নিজেদের সন্তানদের বিভিন্ন রাইডে উঠিয়ে আনন্দ দিচ্ছেন। তবে শিশুপার্কের রাইডের টিকিটের দাম তুলনামূলক অনেক বেশি অভিযোগ করেন দর্শনার্থীরা।
কথা হয় গৃহস্থালী পন্যের ব্যবসায়ী রহমতুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, অবশেষে ৫ দিন পর বানিজ্য মেলা জমে উঠলো। সকাল থেকেই বানিজ্যমেলায় দর্শনাথীরা ভিড় করতে শুরু করেছে। বিক্রি বেড়েছে অনেক। এ কারণে আমরাও খুশি।
কথা হয় বিখ্যাত বালু চা ব্যবসায়িক রাজা বাবুর সাথে। তিনি জানান, গত কয়েকদিন বিক্রি কম থাকলেও ছুটির দিন শুক্রবার থেকে প্রচুর লোক সমাগম হচ্ছে এবং চা বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী কমল বলেন, আমরা গত ৫ দিনে কোনো ফার্নিচার বিক্রি করতে পারিনা। ছুটির দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হলো। জমতে শুরু করেছে বানিজ্যমেলা। সকাল থেকে টেবিল, চেয়ার, খাটসহ বেশকয়েকটি ফার্নিচার বিক্রি করেছি।
ব্যবসায়ী খালেকুজ্জামান বলেন, ভেবেছিলাম এবার মেলা থেকে মুলধেনের টাকাও নিয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু আজকে প্রেক্ষাপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। মেলায় আজ দর্শনার্থীরা যেভাবে আসতে শুরু করেছে এতে আমরা অনেক খুশি।
ময়মনসিংহ থেকে মেলায় আশা দর্শনার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য মেলায় আসার দীর্ঘদিনের সখ আমার। মেলায় আসতে গিয়ে বাইপাস সড়কে যানজটে পড়ে ১০ মিনিটের রাস্তা দুই ঘন্টা লেগেছে। বাড়ি ফেরার পথে কতক্ষণ রাস্তায় বসে থাকতে হয় আমার জানা নেই। মেলায় আসতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো বাইপাস সড়কে যানজট। যানজট মুক্ত রাখতে মেলা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ভালো থাকা উচিত।
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী আকলিমা আক্তার বলেন, কিছু পণ্য ক্রয় করলাম। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যানজট নিরসনেও কাজ চলছে।
বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, আগেই বলেছিলাম ছুটির দিন শুক্রবার থেকে বানিজ্যমেলা পুরোপুরি জমে উঠবে। মেলায় জমে ওঠায় মেলা প্রাঙ্গণ এখন অনেকটাই পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে। মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। মেলায় ভিড়ের কারণে বিক্রিও বেড়েছে। এতে ব্যবসায়ীরাও খুশি।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য