মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল ঢাকায় সফর করছেন। তার সঙ্গে বৈঠকের পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, মালয়েশিয়ার সাথে আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যা যা আছে, আলোচনায় সব কথাই হয়েছে। এখানে কর্মী প্রেরণের খরচের ব্যাপার আছে, ওখানে যাওয়ার ব্যাপার আছে; সববিষয়েই আলোচনা হয়েছে।
রোববার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক করেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বৈঠক শেষে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীনসহ দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইমরান আহমদ বলেন, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়ায় কিন্তু এখন নতুন সরকার। আগের সরকারের সঙ্গে আমাদের যা কিছু কথা হয়েছে, এখন কিন্তু বিরাট একটা পরিবর্তন আসবে। এ জিনিসটা তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, এমওইউ পরিবর্তন করার কথা এসেছে। প্রয়োজন হলে আরও কিছু পরিবর্তন আসবে অথবা যাতে আরও বেশি সহজ হয়ে যায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কিন্তু উনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) এখনও দিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু আমার বিশ্বাস, যে দায়িত্ব নিয়ে তিনি (মালয়েশিয়ার মন্ত্রী) কথা বলেছেন, আমরা ভালো কিছুই পাবো।
চলতি মাসেই দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বসবে। সে সময় এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।
এদিকে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় অভিবাসন ব্যয় কমিয়ে আনতে চায় মালয়েশিয়া। ভবিষ্যতে এ নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিরা বসবেন। তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখবেন , সমঝোতা চুক্তিতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন আছে কিনা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সফররত মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন বিন ইসমাইল।
সাইফুদ্দিন নাসুসন বলেন, আমরা আগের করা সমঝোতা চুক্তি নিয়ে কথা বলেছি। আজকের আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল এই চুক্তি। মালয়েশিয়া সরকার প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে চায়, যাতে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, চাহিদা পূরণ করা, ব্যয় কমানো ও বিদেশি কর্মীদের সম্মান রক্ষা করা। যদি বর্তমান প্রক্রিয়ায় সেই লক্ষ্যে পৌঁছানো না যায়, আমরা পরিবর্তন আনতে প্রস্তুত। সে জন্য আমরা আলোচনায় বসব।
তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে ১৫ লাখ বিদেশি কর্মী আছে, যার মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ বাংলাদেশি। এজন্য বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার ১৫টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে প্রথম স্থানে আছে। বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আজকে দুটি ইস্যুতে ফলপ্রসূ আলাপ হয়েছে। প্রথমত, রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম আরও দ্রুত করার বিষয়ে। দ্বিতীয়ত, মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসন ব্যয় কমাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম প্রসঙ্গে সাইফুদ্দিন নাসুসন বলেন, মালয়েশিয়ায় অনেক অবৈধ কর্মী আছেন। তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বৈধ করা হচ্ছে। গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এই প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি জানাতে চাই যে, এক সপ্তাহে বৈধকরণের যা অনুমোদন আমরা দিয়েছি, তার ৫৫ শতাংশ বাংলাদেশি।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের মন্ত্রী ইমরান আহমদকে অনুরোধ জানিয়েছি সহযোগিতার জন্য, বাংলাদেশ যেন তাদের অংশটুকু পালন করে, যেন আমরা আমাদের কর্মীর চাহিদা পূরণ করতে পারি। আমরা অনুমোদন দেওয়ার সময় কমিয়ে এনেছি। আগে ২০ থেকে ৩০ দিন সময় নেওয়া হতো। এখন ২ থেকে ৩ দিনে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। এটি একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন।’
এর আগে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। গত শনিবার বিকেলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি। দেশটিতে নতুন সরকার গঠনের পর মন্ত্রী পর্যায়ের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর।
সফরের দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে বৈঠক করেন তিনি।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য