আলোচনায় থাকা ভারতীয় প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপ যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে, সেই কেন্দ্রের জন্য কয়লার দাম ৬০ ভাগ বেশি ধরতে চায় তারা। আদানি কয়লার দাম বেশি ধরলে বাংলাদেশকে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। জানা গেছে, আদানি গ্রুপ টন প্রতি কয়লার দাম ধরতে চায় ৪০০ ডলার। এই দরে কয়লা আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার কথা তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)।
ইতোপূর্বে, বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত রামপাল এবং বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে করা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম পড়ছে প্রতি টন ২৫০ ডলারের মতো। কিন্তু আদানি প্রতি টন কয়লার যে দাম প্রস্তাব করেছে, তা রামপাল ও পায়রার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। তবে, আদানির প্রস্তাবিত কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পিডিবি।
দর নিয়ে আলোচনার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে আদানিকে চিঠিও দিয়েছে পিডিবি। সে অনুযায়ী আদানির একটি কারিগরি প্রতিনিধিদল আলোচনা করতে ঢাকায় আসবে। সেখানে কয়লার দাম পুনর্মূল্যায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
যে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা, সেটি নির্মাণ করা হয়েছে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায়। কয়লাভিত্তিক ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। এখানে উৎপাদিত পুরো বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। আগামী মাস, অর্থাৎ মার্চে আদানির কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হতে পারে। তবে উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পিডিবি।
আদানিকে দেওয়া পিডিবির চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে দামে কয়লা কেনা হচ্ছে, সেই দামেই আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা কিনতে হবে। ওই দুটি কেন্দ্রের চেয়ে খুব বেশি বাড়তি দামে কয়লা কেনা যাবে না। কয়লার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া (নিউক্যাসল ইনডেক্স) ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স (সূচক) বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ দেশ দুটি বিশ্বে কয়লার বড় রপ্তানিকারক।
তাদের কয়লার দাম নিয়মিত অনলাইন সূচকে প্রকাশ করা হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঘোষিত দামের আড়ালে বিশেষ ছাড় থাকে। কয়লা কেনার সময় সমঝোতার ওপর ছাড়ের বিষয়টি নির্ভর করে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির ককর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আদানির সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি অনুসারে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সূচকের মধ্যে গড় করে মূল্য হিসাব করা হবে। সাধারণত এ দুটি সূচকে দর কাছাকাছি থাকে।
অবশ্য বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার সূচকে কয়লার দাম টনপ্রতি ১০০ ডলার বেশি। গড় দাম ধরার মাধ্যমে কয়লা কিনে পিডিবির কাছ থেকে বাড়তি দাম নিতে পারে আদানি। এছাড়া ছাড়কৃত দাম না দেখিয়ে সূচকে প্রকাশিত দর ধরে বিদ্যুতের দাম চাইতে পারে আদানি। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর আগেই বিষয়টি সমাধান করতে চাইছেন তাঁরা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে জোর দেয়। একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এখন ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসছে। আদানির সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৭ সালে। চুক্তির পর আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ শুরু করে।
ওই সময় দেশে আমদানি করা কয়লানির্ভর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়নি। তাই কয়লার দামের বিষয়টি নিয়ে ওই সময় পিডিবি ভালো করে যাচাই–বাছাই করতে পারেনি। আদানির নিজস্ব কয়লাখনি ও ভারতে বড় একাধিক কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অভিজ্ঞতার ওপর ভরসা করতে হয়েছে। দেশে ২০২০ সাল থেকে পায়রা এবং গত মাসে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এতে কয়লা আমদানির বিষয়ে এখন পিডিবির একটা ধারণা হয়েছে।
বিদ্যুৎসচিব মো. হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, পায়রা ও রামপালের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার দাম বেশি হবে না। তারাও এতে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। বিদ্যুৎ কেনার আগেই এটা ফয়সালা করা হবে। এটি নিয়ে আলোচনা করতেই আদানির একটি কারিগরি দল আসবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য