মোতাহার হোসেন: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আমদানি পর্যায়ে ডলারের উচ্চমূল্যের প্রভাব পড়েছে দেশের মূল্যস্ফীতিতে। অবশ্য দেশের গড় মূল্যস্ফীতি বাড়ার ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এবার সেটি সত্যি হলো। মার্চে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতেও এ হার ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে মানুষের নাভিশ্বাস ও সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে মানুষের ভোগান্তি লাঘবে নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
বিশেষ করে ব্যাংকগুলোকে বকেয়া, অনাদায়ী ঋণ দ্রুত আদায়, অবাঞ্চিত ব্যয় হ্রাস, সরকারি পর্যায়ে কেনাকাটায় অধিকতর সর্তকতা অবলম্বন, ব্যাংকে গচ্ছিত অলস অর্থের যথাযথ ব্যবহার, আলোকসজ্জা না করা, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অর্থের সঠিক ও স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা, সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমন নিয়ন্ত্রণ, বিলাসী পণ্য, ফল, জেলি, বিস্কুট সামগ্রী আমদানিও ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে। সরকারি এসব উদ্যোগ যথাযথ বাস্তবায়ন হলে মূল্যস্ফীতির হার ধীরে ধীরে কমে আসবে এমনটিই প্রত্যাশা বিশেষজ্ঞ মহলের। তারা মনে করেন, পণ্য আমদানির নামে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার, ব্যবসায়ীদের কারসাজি, বেশি মুনাফার কারণেই মানুষের দুর্ভোগ এবং অবিশ্বাস্য হারে পণ্যমূল্য বাড়ছে। এসব ঠেকানো না গেলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না, কমবে না মূল্যস্ফীতিও।
বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে, খাদ্য খাতে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, গত মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিবিএস তার পরিসংখ্যানে বলছেÑ মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম কমায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম। খাদ্যবহির্ভূত খাতে গত মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ।
অন্যদিকে, একনেক সভা শেষে সাংবাদিকদের মূল্যস্ফীতির বিষয়টি জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, যেহেতু বিশ^বাজারে তেলের দাম বেড়েছে, সেহেতু এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে। সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির খবর জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এর আগে বলেছিলাম মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সেই ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছে। তবে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, ১০ শতাংশ হয়নি।
অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এডিবি বলেছে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এতে সরকারের প্রতিক্রিয়া কী? জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এডিবির চেয়েও বেশি বলেছি। মার্চে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। সুতরাং এটি এডিবির অনুমানের চেয়েও বেশি। আমরা যদি ম্যানিপুলেট করতাম, তাহলে তো বেশি বলতাম না।’
তখন সাংবাদিকরা জানতে চান, বাজেটে যে মূল্যস্ফীতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সেটি কি তাহলে বেড়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘সারা বছরের গড় করলে আমাদেরটা (মূল্যস্ফীতির হিসাব) কমে আসবে। আর আমরা বাজেটের ফোরকাস্ট কীভাবে বাড়াব।’
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা সংস্থাগুলোর জরিপের প্রতিক্রিয়ায় ড. শামসুল আলম বলেন, ‘এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কী বলল, এডিবি কী বলল, সানেম কী বলল, সেটা তো কখনোই হিসাবে আসবে না। সানেম বলে, সিপিডি বলে, তাদের গবেষণার টাকা কোত্থেকে আসে? এটি কি সরকারের না তাদের নিজের? তারা যে এজেন্সি থেকে টাকা নেয়, সে এজেন্সিকে সন্তুষ্ট করার জন্য যা দরকার তারা তাই বলে। সানেম, সিপিডির হিসাব কখনোই কম্পারেবল না।’ তিনি বলেন, ‘তেলের দামের ফলে আবারো মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। সৌদি আরব ও রাশিয়া তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ২২ শতাংশ। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। আগস্টে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে কিছু কমতে থাকলে ফেব্রুয়ারি থেকে আবার বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য