-->
শিরোনাম

বাজেটে চ্যালেঞ্জ থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বাজেটে চ্যালেঞ্জ থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বাজেট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেটকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী বাজেট। নানা কারণে এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই চলছে আলোচনা।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজেটে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

 

এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানো, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে বাজেটের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেটের এ আকার পরিবর্তনও হতে পারে। বাংলাদেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে আগামী ১ জুন।

 

রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে আগামী ৩১ মে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন ডেকেছেন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ জুন অর্থমন্ত্রী ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১ জুন অনুষ্ঠিত হবে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এ বিশেষ বৈঠক। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে নতুন অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেয়া হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত নতুন অর্থবছরের বাজেটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য সম্মতিসূচক স্বাক্ষর করবেন। সময়ক্ষেপণ না করতে রাষ্ট্রপতি সেদিন বঙ্গভবনের পরিবর্তে জাতীয় সংসদ ভবনের রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অফিস করবেন।

 

রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করবেন। পরে স্পিকারের অনুমতিসাপেক্ষে জাতীয় সংসদে সরকার আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবে।

 

জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার ব্যয়সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

নতুন এডিপি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ১৬ শতাংশ বেশি এবং মূল এডিপির তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও দেশের সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৭ মে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন আগামী ১ জুন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ১ জুন বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় সংসদে।

 

এর আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১ জুন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম বাজেট (৭৮৬ কোটি টাকা) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন ৩০ জুন।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫ ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাজেট চ‚ড়ান্ত করার আগে বাজেট ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫.৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭.৩ শতাংশ করা হতে পারে।

 

জানা গেছে, সার্বিকভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের সুদ ব্যয়ে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকিতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বিপুল ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল, পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ২৩ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।

 

আগামী অর্থবছর কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। এদিকে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সরকারের শেষ বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নতুন করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার জন বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তের কথা অবহিত করা হয়।

 

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য তা বাড়িয়ে ৫ লাখ কোটি টাকা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকেই (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।

 

মুদ্রাস্ফীতি কী: মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির একটি স্বাভাবিক চিত্র হলেও বড় ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য অভিঘাত হিসেবে দেখা হয়। মুদ্রাস্ফীতি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার দাম বেড়ে যাওয়াকে, যা সাধারণত ঘটে অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহের কারণে।

 

সহজ ভাষায় বললে, একটি দেশের বাজারে পণ্যের মজুত এবং মুদ্রার পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হয়।

 

যদি পণ্যের তুলনায় মুদ্রার সরবরাহ অনেক বেড়ে যায় অর্থাৎ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা ছাপায় তখনই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। এর ফলে একই পরিমাণ পণ্য কিনতে আপনাকে আগের চাইতে বেশি মুদ্রা খরচ করতে হবে। এর মানে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ওই মুদ্রার মান বা ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে।

 

ধরুন, গত বছর ২০ কেজি চাল কিনতে আপনার খরচ হতো ১০০০ টাকা। কিন্তু চলতি বছর সেই একই পরিমাণ চাল কিনতে আপনার খরচ পড়ছে ১০৫০ টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে ৫০ টাকা বা ৫ শতাংশ বেশি টাকা লাগছে। এই ৫ শতাংশ হলো মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ। এর মানে টাকার মানও ৫ শতাংশ কমে গেছে। এভাবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের পরিবর্তন হিসাব করে মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপ করা হয়।

 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি যদি ওই দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম থাকে, তাহলে সেটার তেমন নেতিবাচক প্রভাব থাকে না। সাধারণত ২ থেকে ৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি থাকলে সেটাকে সহনীয় বলা যায়। ৭ থেকে ১০ শতাংশ হলে মধ্য ও নিম্নবিত্ত আয়ের মানুষের কষ্ট বেড়ে যাবে এবং এর চাইতে বেশি মুদ্রাস্ফীতি পুরো দেশের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

 

তবে এটা নির্ভর করছে সেই দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version