-->
শিরোনাম

বিনিয়োগকারীদের নজর এখন বাজেটের দিকে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বিনিয়োগকারীদের নজর এখন বাজেটের দিকে

পুঁজিবাজারে স্মরণকালের বড় ধস হয় ২০১০ সালে। এরপর বাজার আর দীর্ঘমেয়াদিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এর মধ্যে কয়েকবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়েছে।

 

ফলে প্রতিবারই বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা আরো বেড়েছে। কখনো মুদ্রা নীতি, কখনো ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা, কখন মার্জিন ঋণ আবার কখনো বাজেটের দিকে তাকিয়ে থেকেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু তেমন একটা সুফল মেলেনে। প্রতিবারের মতো এবারো আসন্ন বাজেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

 

তারা মনে করছেন, বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হলে সেটা তাদের জন্য যেমন স্বস্তির হবে, তেমনি বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার দেখা মেলবে।

 

আগামী ১ জুন পেশ হতে যাচ্ছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। একে ঘিরে প্রত্যাশায় রয়েছেন দেশের সব শ্রেণির মানুষ। পাশাপাশি পুঁজিবাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় কোটি মানুষ তাকিয়ে রয়েছে এ বাজেটের দিকে। তাদের প্রত্যাশা বাজেট পুঁজিবাজারবান্ধব হলে স্থিতিশীলতার দিকে যাবে পুঁজিবাজার। এ বছরের বাজেটেও বিনিয়োগকারীদের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে।

 

এগুলোর মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয় কর কমানো, এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সময় বাড়ানো, বন্ডের সুদজনিত আয়কে করমুক্ত রাখা, লভ্যাংশে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশে আয়কর কমিয়ে আনা।

 

জানতে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, প্রতি বছর বাজেটে কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু এর সব প্রতিফলন বাজেটে পড়ে না। বাজেটে যদি এসব প্রস্তাবের প্রতিফলন পড়ে, তবে তা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে। এতে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর বাজার ঘুরে দাঁড়ালে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন না হলে পুঁজিবাজারে আরো বৈরী পরিবেশ তৈরি হবে।

 

এদিকে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বাজার খেলোয়াড়রা দায়ী বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ২০১০ সালের পতনকেও হার মানিয়েছে। সেই সময়ও এমন টানা পতন লক্ষ করা যায়নি।

 

তারা বলেন, ২০১০ সালের বাজার ছিল অতিমূল্যায়িত। সেজন্য ওই বাজারে পতন ছিল স্বাভাবিক ঘটনা, কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। এখন বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ার নেই বললেই চলে। এ পরিস্থিতিতে বাজার পতন কিছুতেই কাম্য নয়।

 

এ প্রসঙ্গে হাসান মাসুদ নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, এ বাজার নিয়ে একটি চক্র খেলা করছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে এদের খুঁজে বের করতে পারে, কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। সেজন্য বাজারচিত্রেরও পরিবর্তন আসছে না। বাজারচিত্র পরিবর্তন করার জন্য আগে কারসাজি রোধ করতে হবে।

 

২০২৩-২৪ অর্থবছরের এ বাজেটকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী বাজেট। নানা কারণে এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই চলছে আলোচনা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজেটে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।

 

এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানো, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে বাজেটের কাজ প্রায় চূড়ান্ত করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটে অনুমোদন দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেটের এ আকার পরিবর্তনও হতে পারে।

 

বাংলাদেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে আগামী ১ জুন। রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে আগামী ৩১ মে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন ডেকেছেন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ জুন অর্থমন্ত্রী ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এসব ছাপিয়ে বিনিয়োগকারীর প্রত্যাশা থাকবে একটি পুঁজিবাজারবান্ধব বাজেট।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version