-->

বাজেটে সুদব্যয়-ভর্তুকিও থাকবে চ্যালেঞ্জ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
বাজেটে সুদব্যয়-ভর্তুকিও থাকবে চ্যালেঞ্জ

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দরজায় কড়া নাড়ছে আরেকটি বাজেট। এক দিন পরেই পেশ হবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের কাঙ্ক্ষিত বাজেট। এ বাজেটকে বলা হচ্ছে নির্বাচনী বাজেট। নানা কারণে এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে এখনই চলছে আলোচনা।

 

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজেটে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ থাকবে প্রধান চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি থাকবে সুদ ব্যয় ও ভর্তুকি সামলানোর চাপ।

 

গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা সত্তেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকির চাপ অনেক বেশি বাড়ছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প ও ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)-সহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের ঋণের দায় পরিশোধ শুরু হলে নতুন অর্থবছর সুদ পরিশোধেও বাড়তি ব্যয় হবে।

 

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার সাম্প্রতিক অবমূল্যায়ন এবং লাইবর ও সোফর সুদহার বেড়ে যাওয়াও আগামী অর্থবছরে সরকারের সুদ পরিশোধের সম্ভাব্য ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হবে। ফলে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়নের প্রাক্কলন করলেও সুদ ব্যয় ও ভর্তুকির চাপ সামলাতেই ব্যয় হবে মোট বাজেটের ২৫ থেকে ২৭ শতাংশ।

 

গত ৫ এপ্রিল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন বাজেট ম্যানেজমেন্ট, কারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট-এর এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

জানা যায়, এছাড়া রাজস্ব আদায় বাড়ানো, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা এবারের বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে। এগুলো মোকাবিলা ও সমন্বয় করে নির্বাচনের বছরে কীভাবে ব্যয় সমন্বয় করা যাবে, তা নিয়ে বাজেটের কাজ প্রায় চ‚ড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগামী বছরের জন্য চূড়ান্ত করা বাজেটের অনুমোদন দিয়েছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে ১ জুন জাতীয় সংসদে সরকারের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে বাজেটের এ আকার পরিবর্তনও হতে পারে। বাংলাদেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ২৪তম বাজেট পেশ হতে যাচ্ছে আগামী ১ জুন।

 

রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে আগামী ৩১ মে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন ডেকেছেন। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার হবে ১২ শতাংশ বেশি।

 

সর্বশেষ ২০২২ সালের ৯ জুন অর্থমন্ত্রী ২০২৩ সালের ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

ভর্তুকি ও সুদের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন পণ্য ও সেবায়ও বরাদ্দ বাড়ছে। ফলে সরকারের পরিচালন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ৪,৯৬,৯৫৫ কোটি টাকায়, যা দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৯.৯ শতাংশ। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে এটি ছিল জিডিপির ৯.৭ শতাংশ।

 

ভর্তুকি, সুদ পরিশোধ এবং সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার ফলে এ বছরের মূল বাজেটের তুলনায় নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার বাড়ছে মাত্র ৮ শতাংশ।

 

এদিকে নতুন অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে এডিপিতে ২.৬৩ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১.৬৯ লাখ কোটি টাকা এবং বাকি ৯৪,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে বৈদেশিক সহায়তা থেকে।

 

২০২৩-২৪ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ থাকছে প্রায় ১.৩০ লাখ কোটি টাকা। এবারের মূল বাজেটে যার পরিমাণ ১.১৩ লাখ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ৭ মে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন আগামী ১ জুন।

 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়বার ১ জুন বাজেট উপস্থাপন করা হচ্ছে জাতীয় সংসদে। এর আগে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন ১ জুন।

 

অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ দেশের প্রথম বাজেট (৭৮৬ কোটি টাকা) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছিলেন ৩০ জুন।

 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় বৈঠক ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.৫ ধরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তবে বাজেট চূড়ান্ত করার আগে বাজেট ঘাটতি একটু বাড়িয়ে ৫.৩ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধির হার একটু কমিয়ে ৭.৩ শতাংশ করা হতে পারে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version