-->

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মচ্ছবে উল্টোরথে পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মচ্ছবে উল্টোরথে পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ডিজেলের দর বেড়েছে। বাস ভাড়া বেড়েছে। লঞ্চ ভাড়া বেড়ে গেছে। এলপিজির দাম বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে চাল, ডাল ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর। সবজির বাজারেও চলছে অস্থিরতা। বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে নিত্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জনসাধারণকে। চলছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির মহোৎসব। উল্টো চিত্র শুধু পুঁজিবাজারে। দর বৃদ্ধির বদলে প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে শেয়ার ও ইউনিটদর। ফলে চিন্তার ভাঁজ পড়ছে বিনিয়োগকারীদের কপালে।

 

বর্তমানে পাইকারি বাজারে মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা আর সরু চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া গেলেও মসুর ডালের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এ মুহূর্তে কমবেশি কেজিপ্রতি প্রায় ১৪০ টাকা দাম মসুরের ডালের। ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল এখন বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৯০০ টাকা। আবার আটার দাম বড়েছে চিনির দাম বেড়ে ওঠানামা করছে থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে।

 

পেঁয়াজের দাম এ বাড়ছে, কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। এসব পণ্য ছাড়াও ডিম, মুরগি ও গরুর মাংসের দামের পাশাপাশি বেড়েছে নানা ধরনের সবজি ও মাছের দামও। কিন্তু পুঁজিবাজারে বেশিরভাগ শেয়ারদর এখনো তুলনামূলক কম থাকলেও বাড়ছে না এর দর। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হচ্ছে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে লাভের আশায় প্রতিনিয়ত লোকসানের হিসাব করেই খুশি থাকতে হচ্ছে তাদের।

 

এ প্রসঙ্গে রাশেদ আলী এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেয়ার ব্যবসা করেই আমাকে সংসার চালাতে হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সংসার চালানোর খরচ আরো বেড়ে গেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে দেখতে হচ্ছে উল্টো চিত্র। প্রতিনিয়ত শেয়ারদর কমছে। সম্প্রতি যে শেয়ারগুলোয় বিনিয়োগ করেছিলাম, সেসব শেয়ারের দর ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। ফলে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি।’

 

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিনিয়োগকারী বলেন, বিএসইসি চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আশার বাণী শুনে পুঁজিবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করে উল্টো চিত্র দেখতে হচ্ছে। একদিকে পুঁজিবাজারে নিত্য লোকসান দিতে হচ্ছে; অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের অবস্থা খুবই করুণ।

 

এক বছরের বেশি সময় ধরে পুঁজিবাজার ইতিবাচক প্রবণতায় থাকলেও সম্প্রতি হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া এর চিত্র বদলে যায়। একযোগে কমতে শুরু করে তালিকাভুক্ত প্রায় সব শেয়ার ও ইউনিটদর। যে কারণে কমতে শুরু করেছে বাজার মূলধন ও সূচক। তবে পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের বাজারে মানিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

 

তাদের মতে, দীর্ঘদিন বাজার ভালো থাকার কারণে এখন কিছুটা দর সংশোধন চলছে। পাশাপাশি পেনিক হয়ে শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

 

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী অল্পতে ধৈর্যহারা হয়ে পড়েন। তারা ভীত হয়ে লোকসানে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দেন। এটা ঠিক নয়। এতে তাদেরই আর্থিক ক্ষতি হয়।

 

জানা গেছে, গত এক মাসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। এক মাস আগে ডিএসইর বাজার মূলধনও কমেছে। এদিকে গত এক মাসের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচকও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে দেখা গেছে। এ সময় সূচক কমেছে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। এদিকে দর সংশোধন চলছে এমন মন্তব্য মেনে নিতে পারছেন না পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকে।

 

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকাজের হাউসের কর্মকর্তা বলেন, দর সংশোধনের বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এক বা দুদিন হলে তাকে বাজার সংশোধন বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু প্রতিনিয়ত দরপতনকে কোনোভাবে দর সংশোধন বলে আখ্যায়িত করা যায় না।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version