দেশে প্রতিদিন গড়ে রেমিট্যান্স আসছে ৭ কোটি ডলারের বেশি। আগামীতে এর পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ের প্রথম দুই সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৯ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। দৈনিক গড়ে দেশে এসেছে ৭ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের ১৬ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রবাসীদের উদ্দেশে জানায়, বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করুন, প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন। হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে রেমিট্যান্স না পাঠাতে আহব্বান জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পর থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ বাড়ছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১২ কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে (হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে) প্রেরণ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ এবং এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রবাসীদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো জানায়, আপনাদের অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা হুন্ডি বা অন্য কোনো অবৈধ পথে না পাঠিয়ে বৈধ পথে বা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করুন, দেশ গড়ায় মূল্যবান অবদান রাখুন এবং আপনার প্রিয়জনকে ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ রাখুন।
আরো জানায়, অবৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে প্রমাণ সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে বিএফআইইউ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
এদিকে এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বাড়ানো, বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, সরকার রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা প্রদান, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজিকরণ পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধকরণ এবং রেমিট্যান্স প্রেরণে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে এবং সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলারে বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৬ লাখ মার্কিন ডলার। আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য