-->
শিরোনাম
গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য

কম মূল্য দেখিয়ে পোশাক রপ্তানি

মোতাহার হোসেন
কম মূল্য দেখিয়ে পোশাক রপ্তানি

মোতাহার হোসেন: তৈরি পোশাক রপ্তানির নামে হরিলুট চলছে। বিশেষ করে রপ্তানি পর্যায়ে নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি করায় সরকারের গচ্ছা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। পাশাপাশি অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। রপ্তানিমুখী ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সম্প্রতি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ তদন্ত ও অনুসন্ধান শেষে পোশাক রপ্তানির নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ হরিলুটের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে। একই বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসও তদন্ত করে অনুরূপ তথ্য পেয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রের।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠান তৈরি পোশাক রপ্তানি পর্যায়ে একটি নতুন টি-শার্টের দাম নির্ধারণ করেছে ৩ টাকা। আর একটি নতুন প্যান্টের দাম নির্ধারণ করেছে মাত্র ২ টাকা। এত কম দামে পণ্য রপ্তানি দেখিয়ে ২০ প্রতিষ্ঠান গত তিন বছরে পাচার করেছে কমপক্ষে একশ পঁচাত্তর কোটি টাকা। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে টাকা পাচারের এমন তথ্য উদ্ঘাটন করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এই চক্রে আরো কারা আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পুরো চক্রকে আইনের আওতায় এনে অধিদপ্তর এটি জানাবে আনুষ্ঠানিকভাবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এমন জালিয়াতি করেছে, সেগুলোর একটি হলো রিফাত অ্যান্ড সিফাত অ্যাপারেলস।

 

সূত্র জানায়, গত জুনে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানিকালে ঢাকার রিফাত অ্যান্ড সিফাত অ্যাপারেলসের তৈরি পোশাকের একটি কনটেইনার জব্দ করেন কাস্টমস গোয়েন্দারা। রপ্তানির ঘোষণায় মাত্র ১৭ হাজার ১৪৩ পিস থাকলেও, বাস্তবে পাওয়া যায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৯৮ পিস পোশাক। পরে প্রতিষ্ঠানটির আরো ৬ কনটেইনার জব্দ করা হয়।

 

তবে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তারা ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য পাঠালেও মাঝখানে জালিয়াতি করেছেন সুজন বিশ্বাস নামে এক ব্রোকার। তাকে সিঅ্যান্ডএফ এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তবে ঘোষণার অতিরিক্ত রপ্তানি পণ্যের টাকা দেশে আসছে না অথবা এলেও তা ফিরছে হুন্ডিতে এমন তথ্য পান কাস্টমস গোয়েন্দারা। তাই তারা নজরদারি শুরু করেন। একপর্যায়ে মিলেছে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের চাঞ্চল্যকর তথ্য। এতদিন আমদানিতে দাম কম দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি এবং টাকা পাচারের অপতৎপরতা থাকলেও এবার প্রমাণ মিলল রপ্তানিতে কারসাজির। এতে জড়িত কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।

 

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, কারখানা থেকে লেফট ওভার বা স্টক লটের পোশাক কিনে নিয়ে রপ্তানিতে জালিয়াতির আশ্রয় নিচ্ছেন একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। কারসাজির কারণে পণ্যের সংখ্যা বা পরিমাণের সঙ্গে দামের তারতম্য আকাশ-পাতাল। দেখা যাচ্ছে, সাড়ে ১৬ হাজার টি-শার্ট বা সিংগ্লেটসের দাম দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ ডলার। অর্থাৎ প্রতি পিসের দাম মাত্র ৩ সেন্ট (প্রায় ৩ টাকা)।

 

আরেকটি প্রতিষ্ঠান একই রকম পোশাক ৩০ হাজার পিস পাঠিয়েছে মাত্র ৬ হাজার ডলারে, যার প্রতি পিসের দাম পড়েছে মাত্র ২ টাকা। অন্য আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ৪১৭ ডলারে পাঠিয়েছে ২৪ হাজার ৮৭০ পিস। এ হিসাবে প্রতি ইউনিটের দাম পড়েছে প্রায় ২৫ টাকা। এমন দাম কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয় বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর হিসাব অনুযায়ী রপ্তানি উপযোগী সবচেয়ে নিম্ন মানের টি-শার্ট বা সিংগ্লেটস কারখানা থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে কেনার কোনো সুযোগ নেই। শর্ট কিংবা লং প্যান্ট অন্তত ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হবে পলি প্যাক, কার্টনসহ নানা খরচ। তাই রপ্তানিমূল্য সিংগ্লেটসের ন্যূনতম ৫০ টাকা, টি-শার্ট ৯০ থেকে ১০০ টাকা, শর্ট ও লং প্যান্ট ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। শার্টের দাম হবে ১৭০ টাকা। তবে এ ব্যাপারে বিজিএমএর কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version