মোতাহার হোসেন: রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিয়ে সরকারের দুশ্চিন্তা ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে মন্দ ঋণ ও অনাদায় ঋণভারের জর্র্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংক। দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী খেলাপি ও মন্দ ঋণ আদায়ে সাঁড়াশি অভিযানে নামছে ব্যাংকগুলো। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়েই মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকে শুধু এক বছরে মন্দ ঋণ বেড়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। বাস্তবে পরিচালনা পর্ষদ, আত্মীয়করণ, দলীয় চাপ ও অবৈধ হস্তক্ষেপে মন্দ ঋণ ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। ব্যাংকগুলো হচ্ছে জনতা, সোনালী, অগ্রণী, রূপালী, পূবালী, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এক বছরের ব্যবধানে এই ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৯৬ কোটি টাকা। ফলে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে অর্থাৎ গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৪৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে অবলোপনকৃত মন্দ ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’ (এপিএ)-এর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি কমাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় স্থিতির পরিমাণ ৬১৮ কোটি টাকা বেশি।
অন্যদিকে সমাপ্ত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মোট আদায় করেছে ২০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সোনালী, জনতা ও বিডিবিএল এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আর অর্জন করতে পারেনি অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, অবলোপনকৃত ঋণের শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এরপর রয়েছে অগ্রণী, জনতা, বেসিক, বিডিবিএল ও রূপালী। তবে এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, একমাত্র বেসিক ব্যাংকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অধিক অবলোপনকৃত ঋণ রয়েছে।
এপিএর আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত জুন শেষে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৫৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে এপিএর আওতায় গত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে সোনালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। জনতা ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৮৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে জনতার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অগ্রণীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪২ কোটি টাকা।
রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৭৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রূপালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বেসিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বেসিকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
বিডিবিএলের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বিডিবিএলের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য