মাত্র দেড় বছর আগে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রায় দেউলিয়া হওয়ার জেরে ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছিল শ্রীলঙ্কায়; যার পরিণতিতে পদত্যাগ করতে হয়েছিল দেশটির সরকারকে। দেশ ছাড়তে হয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাভায়া রাজাপাকশাকেও। সে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে দেশটি এবং জমে উঠতে শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি পর্যটন খাত এবং জ্যামিতিক হারে বাড়ছে দেশটির রেমিট্যান্স।
জুন মাসে রেমিট্যান্সের যে হিসাব পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে- দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অবদান এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়তে; যা বাংলাদেশের চেয়ে এক ধাপ ওপরে। তবে রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান শ্রীলঙ্কা থেকে দুই ধাপ ওপরে। এশিয়ার রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে আছে ভারত, এরপর পাকিস্তান, তৃতীয়তে বাংলাদেশ, চতুর্থ নেপাল এবং পঞ্চম অবস্থানে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত জুন-২০২৩ প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে রয়েছে ভারত। ২০২২ সালে ভারতের প্রবাসী আয় ১১১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার; যা বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ভারতের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৬ নম্বরে। বিশ্ব ব্যাংকের জুনের প্রতিবেদন সূত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব তথ্য দিয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবাসী আয়ে ভারতের পরই পাকিস্তানের অবস্থান। ২০২২ সালে পাকিস্তান রেমিট্যান্স পেয়েছে ২৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এই অংক বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের ৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ, এছাড়া দেশটির জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদান ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়।
প্রবাসী আয়ে ভারত ও পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ২০২২ সালে রেমিট্যান্স থেকে বাংলাদেশের আয় করেছে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবাসীদের এই আয় বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবাসী আয় দেশটির মোট জিডিপিতে অবদান রাখছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ।
দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স আহরণে অন্য দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে আছে নেপাল। দেশটি প্রবাসী আয় ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার যা বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের ১ দশমিক ১১ শতাংশ। দেশটির প্রাবসী আয় তাদের মোট জিডিপির ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দেশটি।
রেমিট্যান্স আহরণে পঞ্চম অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। ২০২২ সালে তাদের আয় ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার যা বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং তাদের মোট জিডিপির ৫ দশমিক ১ শতাংশ। জিডিপিতে প্রবাসী আয়ের অবদানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয়তে আছে শ্রীলঙ্কা।
একই সময় আফগানস্তানের প্রবাসী আয় দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার যা তাদের মোট জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ এবং ভুটানের প্রবাসী আয় দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার যা দেশটির মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে ও ব্যাংকিং চ্যানেলে দুই হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। এ আয় এ যাবৎকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহরণ। দেশে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের জিডিপির আকার ৩ হাজার ৭৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের ৪৬০ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের জিডিপির আকার ৩৭৬ বিলিয়ন এবং শ্রীলঙ্কার জিডিপির আকার ৮০ দশমিক ৫৯১ বিলিয়ন ডলার।
বৈশ্বিক জিডিপির তালিকা অনুযায়ী ভারতের অর্থনীতির অবস্থান পঞ্চম, বাংলাদেশের ৩৫, পাকিস্তান ৪২ এবং শ্রীলঙ্কা ৭৬তম স্থানে রয়েছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য