টানা দরপতন থেকে বেরিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। এর আগে চার সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কা শুরু হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ারবাজারেও মন্দা প্রবণতা দেখা দেয়। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে টানা চার সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকে শেয়ারবাজার। তবে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজার ছিল বেশি ইতিবাচক।
ফলে মূল্যসূচক ও বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। আগের চার সপ্তাহের মতো গত সপ্তাহের বেশিরভাগ কার্যদিবস অবরোধের মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশ। বিএনপির ডাকা এই অবরোধের মধ্যে শেয়ারবাজারের লেনদেন প্রক্রিয়া ছিল স্বাভাবিক। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৩০টির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
বিপরীতে দাম কমেছে ৩১টির। আর ২১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোর প্রাইসে (সর্বনিম্ন দাম) আটকে রয়েছে। ক্রেতা না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট বিক্রি করতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
দাম বাড়ার তালিকা বড় হওয়ায় সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। যা গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৭ লাখ ৭১ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৯২ কোটি টাকা বা দশমিক ২৭ শতাংশ। আগের চার সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১০ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বা দশমিক ১৭ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক গত সপ্তাহে বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা দশমিক ৫৬ শতাংশ।
আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে দশমিক ৬৭ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। সবকটি প্রধান মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৫৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৯০৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৩৭২ কোটি ৫ লাখ টাকা বা ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ৭৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা লেনাদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইয়াকিন পলিমার, এমারেল্ড অয়েল, আফতাট অটোমোবাইল, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, এসকে ট্রিমস, প্যাসেফিক ডেনিমস এবং মুন্নু সিরামিক।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য