বীমা ব্যবসা একটি দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে যেমন জিডিপির হার বৃদ্ধি, গার্হস্থ্য সঞ্চয়ের মাত্রা বৃদ্ধি, পারিবারিক আর্থিক সঞ্চয় বৃদ্ধি এবং নিষ্পত্তিযোগ্য আয় বৃদ্ধি। কিন্তু আমাদের দেশে বীমা খাতে নেতিবাচক ধারনার কারনে এর কোনটাই ঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সবচে বড় যে সংকটটি এখন বীমা খাতকে পিছিয়ে রেখেছে তা হলো কোম্পানি বেশী হওয়ার কারনে বিশেষ করে নন লাইফ বীমাখাতে দেশে যে পরিমান বীমাযোগ্য সম্পদ রয়েছে তার তুলনায় অনেক কম সম্পদের বীমা করা হয় তাই কোম্পানি অনেক বেশি মনে হয়।
এ কারনে একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রচলন রয়েছে বাজারে। নন লাইফ কোম্পানিগুলো বর্তমানে শুধু ব্যাংক ফাইন্যান্সড ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলোর বীমা করছে। সেলফ ফাইন্যান্সড ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু বীমা করছে না। আমদানি রপ্তানি ব্যবসার ক্ষেত্রে বীমা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে তারা বীমা করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংক ফাইন্যান্সড ব্যবসার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে বলে তারা বীমা করছে। কিন্তু বীমার প্রয়োজন সকলের, যদি সকল ব্যবসা এবং সম্পদ বাধ্যতামুলকভাবে বীমার আওতায় আনা যায় তাহলে বীমা বাজারের পরিধি বাড়বে।
মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে ননলাইফ বিমা সেক্টরে ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রিমিয়াম অর্জিত হয়। যদি উন্নত বিশ্বের মত বিমাকে সার্বজনীন করা হয় তাহলে প্রিমিয়ামের বাজার হবে প্রায় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা। তখন অশুভ প্রতিযোগিতা তো বন্ধ হবে এবং এখনকার মত মনেও হবেনা যে দেশে বীমা কোম্পানি বেশী। বাজার ছোট হওয়ার কারনে যেটা মনে হচ্ছে। তাছাড়া এখন যদি কোন জায়গায় কোন দুর্ঘটনা ঘটে সরকারকে সাহায্য বা প্রনোদনা নিয়ে হাজির হতে হয়। যেমন কোথাও আগুন লাগলে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারকে সেখানে ছুটতে হয়।
তিনি বলেন,বীমাকে সার্বজনীন করে দিলে কোম্পানি এখন যা রয়েছে তার বেশী দিলেও কোন সমস্যা হবে না। বীমাযোগ্য সম্পদ যদি বাধ্যতামুলকভাবে বীমার আওতায় আনা যায় তখন ইথিকাল ওয়েতে বীমা ব্যবসা করতে পারবে, বীমাদাবী পরিশোধ করতে পারবে বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া বর্তমানে জিডিপিতে বীমা খাত থেকে কন্ট্রিবিউশন মাত্র ০.০৫ শতাংশ রয়েছে। বীমা সার্বজনীন হলে বীমা খাত থেকে জিডিপি আসতে পারে ৫শতাংশ। কোন কোম্পানি সর্বশান্ত হবে না , সরকারের কোষাগারে প্রচুর পরিমানে রেভিনিউ জমা হবে।
উন্নত বিশ্বের মত কোন দুর্ঘটনা হলে বীমা থেকেই তার ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে তাতে অর্থনীতি সচলভাবে চলবে। বর্তমানে বীমা কোম্পানিগুলো বিমাদাবী পরিশোধের ব্যাপারে গড়িমসি করার কারনে বীমা গ্রহিতা লাভবান হচ্ছে না।
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নন লাইফ কোম্পানির বাজারে ডিমান্ড বেশি সাপ্লাই কম বর্তমানে বীমার বাজার অর্থাৎ বীমাযোগ্য সম্পদ কম এ কারণে একটি বীমার জন্য ১০টি কোম্পানি ব্যবসা আহরনের প্রতিযোগিতার কারনে একজন বীমা গ্রহিতার কাছে ১০ জনই যাচ্ছে আর এজন্যেই প্রতিযোগিতামুলকভাবে কাজ পেতে বেশী কমিশন দিয়ে বীমা করতে হয়। ব্যবসা করার জন্য বেশী কমিশন দিয়ে শতভাগ প্রিমিয়াম আনা সম্ভব হয় না। এর প্রভাব পড়ে দাবী পরিশোধের সময়, যদি একটি বীমার জন্য প্রযোজ্য প্রিমিয়াম না পাওয়া যায় তাহলে দাবী পরিশোধে সমস্যা হবে এটা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, বীমার বাজার টা বড় করতে পারলে বিমায় বাধ্যবাধকতা এনে যদি সকল সম্পদ বীমার আওতায় আনা যায় তবে এ অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব। আমাদের দেশে বীমার নিয়ম থাকলেও নিয়ম পালন হয় না। যে কারনে অনেক সময় শুনতে হচ্ছে আর্থিক জালিয়াতির কারনে অনেক কোম্পানি তাদের গ্রাহকদের বীমাদাবী পরিশোধ করতে পারছে না।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য