আমাদের বীমা খাতে যথেষ্ঠ সম্ভাবনা থাকার পরেও শুধু আস্থার সংকটের কারনে এখনও বিকশিত হতে পারেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেনদাবি পরিশোধে বাধ্য করতে পারলে আস্থা ফিরবে। একই সঙ্গে বীমাকে সার্বজনীন করা হলে জিডিপিতে পার্টিসিপেশন বাড়বে। সরকার এবং জনগনের দুর্ভোগও কমবে।
বিভিন্ন অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের তথ্য সুত্রে দেখা যায় দেশে বীমা গ্রহিতা বাড়ছে না, ২০০৮ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে জীবনবিমার গ্রাহক ছিলেন দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেটি কমে দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়। ২০২২ সালে সেটি আরও কমে দশমিক ২২ শতাংশে নেমে যায়। একইভাবে সাধারণ বিমা গ্রাহকের সংখ্যাও কমেছে। অথচ বিমার গ্রাহক ১ শতাংশ বাড়লে দেশের জিডিপিতে ২ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়।
গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না কোম্পানিগুলো। ২০২৩ সালে ১২ হাজার ১১৭ কোটি টাকার বিমা দাবি করেছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকার দাবি পরিশোধ করেছে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো। দাবি পরিশোধের হার ৭২ শতাংশ, পারিশোধ হয়নি ২৮ শতাংশ। তবে ২০২২ সালের তুলনায় দাবি পরিশোধের হার বেড়েছে ৫ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৬৭ শতাংশ।
দেশে এখন মোট ৮২টি অনুমোদিত বিমা কোম্পানি রয়েছে। ২০২৩ সালের হিসাব মোতাবেক বিমার আওতায় আছে দেশের ১ কোটি ৭১ লাখ ১০ হাজার মানুষ। বিমা খাতে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে কর্তৃপক্ষ যদি বীমা কোম্পানিগুলোকে বিমা দাবি পরিশোধের ব্যাপারে বাধ্য করতে পারে তবে এ খাতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এবং বীমা খাতকে খুব তারাতারি আস্থার সংকট কাটিয়ে একটি লাভ জনক খাতে পরিনত করা সম্ভব। এজন্য সরকারের প্রয়োজন আরও দায়িত্বশীল হওয়া। প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করে সরকার যদি গ্রাহকের বিনিয়োগের টাকা তুলে দিতে পারে তাহলে রাতারাতিই আস্থা ফিরবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি দেশের একটি বীমা কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা কালে দেশের বিমা খাতের প্রধানতম সংকট এ খাতকে এগিয়ে যেতে দিচ্ছে না। আলাপকালে ওই কর্মকর্তা বলেন, বীমা খাতকে সময়উপযোগি করতে জারি হয়েছে কর্পোরেট গর্ভন্যান্স কিন্তু কেউ যদি ঠিক ভাবে গাইডলাই পালন না করে তার জন্য কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় না। ২০১০ সালে বীমা আইন প্রনয়নের পর এ যাবৎ ১০টি বিধি, ২০টি প্রবিধি, ৪টি গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিমা শিল্পের উত্তরোত্তর উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শীঘ্রই জারি হবে বীমা আইন সংশোধন ২০২৪।
মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিইও মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিক ভোরের আকাশকে বলেন যেসব কোম্পানি দাবী পরিশোধে গড়িমসি করে সরকারের উচিত ওই কোম্পানিগুলির সম্পদ বিক্রী করে হলেও গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করা। তিনি বলেন, একই সঙ্গে সরকারকে এটাও ভাবতে হবে বীমাকে যদি সার্বজণীন করা যায় তাহলে দুর্ঘটনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সাধারন মানুষকে কস্ট পেতে হবে না সরকারকেও দুশ্চিন্তা করতে হবে না। সিইও বলেন, এই যে আমাদের দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড় রোমালের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে। সরকারকেও নানান ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে বীমাকে সার্বজনীন করে দিতে পারলে, সম্পদ এবং জীবনের বীমা করা থাকলে এমন দুর্যোগে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির দায়িত্ব বীমা কোম্পানিগুলো নিতে পারবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য