আসন্ন অর্থবছরের বাজেট সংসদে পেশ হলেও বিভিন্ন দিক পুনর্বিবেচনার সুযোগ এখনও আছে এবং বাজেট বিষয়ে সব ধরনের প্রতিক্রিয়া আমলে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করার পর বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া আসছে। আমরা সব প্রতিক্রিয়া আমলে নিচ্ছি। যেগুলো বাস্তবসম্মত এবং বাজেটে বাস্তবায়নযোগ্য সেগুলো অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করা হবে। কারণ এখনো বাজেট পাস হয়নি। সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি নিয়ে, বাজেট নিয়ে বিশ্বব্যাংক কী বলছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলেছে ভালো হয়েছে। আমার টাকা লাগবে, বিশ্বব্যাংকের কথা শুনতে হবে। না হলে আপনারা (সমালোচকরা) টাকা দেন।
আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরও বলেন, শেখ হাসিনা সরকার জনবান্ধব সরকার। অনেকেই বলে, সরকার শিগগিরই পড়ে যাবে। কই, সরকার তো পড়ে না। অনেকে বলে, সরকার দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেউলিয়া মানে কি? দেউলিয়া তো হলো না। বিশ্বব্যাংক কিছু বোঝে না, আপনি সব কিছু বোঝেন? বাজেট দিলাম, এটা দেখেন ও বোঝার চেষ্টা করেন। এই বাজেট জনবান্ধব বাজেট। কোনো কিছুতে সমস্যা থাকলে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ আছে।
সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি ড. জিয়াকুন শি, সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সারাদেশে এক কোটি পরিবারকে স্বল্প মূল্যে খাদ্য পণ্য দেয়া হচ্ছে। এর খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। এই কার্যক্রম আরও বাড়ানো হচ্ছে। এলাকাভিত্তিক স্থায়ী দোকানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেখান থেকে সাধারণ মানুষ যখন খুশি ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্যগুলো কিনতে পারবেন। সাপ্লাই চেইনে আরও গবেষণার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। এখন সবাই সাধ্যমতো কোরবানি দিচ্ছে। কথাগুলো কেউ বলে না। এগুলো বললে আমাদের নিয়ে সমালোচনা করা হয়। আজ শহরের অর্থনীতির চেয়ে গ্রামের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। সাপ্লাই চেইনে আরও গবেষণা বাড়ালে গ্রাম থেকে শহরের ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যগুলো সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা হয় উল্লেখ করে টিটু বলেন, এখনো তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানোর রিজার্ভ আছে। শুধু শুধু নেতিবাচক কথা ছড়িয়ে কী লাভ? আর এবারের বাজেটে সরকার বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্দেশ্যে সরকার এবার বাজেট কমিয়েছে। ঘাটতিও কমানো হয়েছে, যা খরচ কমানোর স্বার্থে করা হয়েছে বলে মনে হয়। সেজন্য বলছি, এটি একটি সাহসী বাজেট।
এই বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নয়-ছয় সুদের হার উঠিয়ে নেয়ায় এতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে। উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে বাজেটের ইতিবাচক দিক হলো রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তবে ঋণ খেলাপি কীভাবে কমানো যায় তা সরকারকে চিন্তা করতে হবে বলে জানিয়েছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ব্যাংক একীভূত করার যে উদ্যোগ তার ফলাফল অনিশ্চিত। অর্থমন্ত্রীকে কর আদায়ে জোর দিতে হবে। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) শুধু মাত্র কর আদায়ে ব্যবহার করা দরকার।
সেমিনারে সম্মানীয় অতিথি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিনিধি ড. জিয়াকুন শি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়ালেই কেবল হবে না, খাদ্য নিরাপদ রাখার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য