অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম দুই সপ্তাহ দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন হলেও তৃতীয় সপ্তাহে এসে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসেই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন পৌনে সাত হাজার কোটি টাকা বেড়ে গেছে। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে ১০০ পয়েন্টের বেশি।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম দুই সপ্তাহ বিনিয়োগকারীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দরপতনের পাল্লা ভারী হয়। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম লেখায়, তার দ্বিগুণের বেশির স্থান হয় দাম কমার তালিকায়। একই অবস্থা দেখা যায় দ্বিতীয় সপ্তাহেও। অবশ্য প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে দরপতনের মাত্রা বড় হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় সপ্তাহে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে, তার ১১ গুণ বেশি প্রতিষ্ঠানের স্থান হয় দাম কমার তালিকায়। তবে তৃতীয় সপ্তাহে এসে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললো। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে, তার তিনগুণের বেশি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। ফলে বেড়েছে সবকয়টি মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। আন্দোলন ঘিরে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে উঠলে দেশে কারফিউ জারি করে তিনদিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তবে হাসিনা সরকারের পতন হলে ৬ আগস্ট থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি সব অফিস খুলে দেওয়া হয়। ফলে শেয়ারবাজারেও লেনদেন চালু হয়। হাসিনা সরকার পতনের পর টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে উল্লম্ফন হয়। চারদিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়ে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট।
হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে এরই মধ্যে তিন সপ্তাহ শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৯৩টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৬টির। এছাড়া ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম সপ্তাহে ১০৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ২৭৮টির। এছাড়া ১৫ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে মাত্র ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয় দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমে ৩৫৭টির, ৫টির দাম অপরিবর্তিত থাকে। দাম কমার তুলনায় দাম বাড়ার তালিকায় তিনগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮১ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৯৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে ১৬ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ।
এদিকে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ১০৪ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২০৩ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ২০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বেড়েছে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক। গত সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ২২ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮২ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৪৫ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহেও বেড়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচক বেড়েছে ৩৪ দশমিক ১২ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৮৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭৯২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৬২৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ১৬৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার। প্রতিদিন গড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ৩৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- রেনেটা, ব্র্যাক ব্যাংক, এমজেএল বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, মিডল্যান্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা এবং যমুনা ব্যাংক।
ভোরের আকাশ/ সু
মন্তব্য