দেশীয় উদ্যোক্তাদের বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার সুযোগ বাড়াতে ২০১৯ সালে চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নেয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। সে সময় এর উদ্বোধন করেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন। তবে কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
-নেক্সট হলো- চীনের শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জের একটি সহযোগী কোম্পানির ওয়েবসাইটভিত্তিক বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মটি মূলত উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের সম্মিলন ঘটাতে অনেকটা ‘ম্যাচ-মেকার’-এর কাজ করে। বর্তমানে বিশ্বের ৪২টি দেশের ২ হাজার ৪২১ কোম্পানি এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা পরিকল্পনা জানিয়ে নতুন বিনিয়োগ খুঁজছে। এর মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের ২৫টি এবং পাকিস্তানের ছয়টি কোম্পানি বিদেশি বিনিয়োগ পেতে তাদের ব্যবসা প্রকল্প বিষয়ে ধারণাপত্র প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ২০৫ কোম্পানিও এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগ খুঁজছে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কলম্বিয়া, কানাডা, চীন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, আইসল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, জাপান, লাওস, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, কোরিয়া, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভিয়েতনাম এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে।
ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, এ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে যারা ব্যবসা সম্প্রসারণে নতুন পুঁজির জন্য অংশীদার খুঁজছেন, তারা চাহিদা জানানোর সুযোগ পান। অন্যদিকে বিশ্বে বহু ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী আছেন, তারা নিত্যনতুন আকর্ষণীয় বিনিয়োগ খুঁজছেন, যেখানে বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা পেতে পারেন। বিনিয়োগকারীরা এ প্ল্যাটফর্ম থেকে তাদের বিনিয়োগের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন।
ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাত্ত্বিক আহমেদ বলেন, বাংলাদেশি অনেক প্রতিভাবান তরুণ উদ্যোক্তা আছেন, যারা স্টার্টআপ কোম্পানি নিয়ে কাজ করছেন। অনেকে স্বল্প পরিসরে কাজ শুরুর পর এখন হয়তো পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবে উদ্যোগ বড় করতে পারছেন না। ডিএসইর কৌশলগত অংশীদার শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ উদ্যোক্তাদের তাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার সুযোগ করে দিতে রাজি হয়েছে। তবে বিএসইসির আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না থাকায় ২০১৯ সালে উদ্বোধনের পরও এ প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
অনুমোদন না পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, ২০১৯ সালে ভি-নেক্সট তাদের প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানানোর পর তৎকালীন বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন এর উদ্বোধন করেন। তবে করোনাভাইরাস মহামারিতে অনুমোদন প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে কমিশন গঠনের পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে চান। বিশেষত এ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলে ডিএসইর কোনো ঝুঁকি আছে কিনা বা শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ কতটুকু দায় নেবে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। ডিএসইর পক্ষ থেকে এর উত্তর দেওয়া হয়। তবে শেষ পর্যন্ত নানা জটিলতার কারণে সাবেক কমিশনও অনুমোদন দিয়ে যেতে পারেনি।
এখন ভি-নেক্সট প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী- জানতে চাইলে ডিএসইর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, কয়েকদিন আগ পর্যন্ত তাদের পূর্ণাঙ্গ পরিচালনা পর্ষদও ছিল না। বিএসইসির অনুমোদন পেতে নতুন করে কাজ শুরুর আগে নতুন পরিচালনা পর্ষদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। এর পর ফের বিএসইসির কাছে অনুমোদনের জন্য যাওয়া হবে।
কর্মকর্তারা জানান, এখানে স্টক এক্সচেঞ্জ বা কারও তেমন কোনো ঝুঁকি নেই। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আসার সুযোগ। কে কার প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে বা কে কাকে অংশীদার করবে, তাদের বিষয়। বিএসইসি অনুমোদন দিলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ চাহিদা আলাদাভাবে প্রদর্শিত হবে। থাইল্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জ এবং মালয়েশিয়ার স্টক এক্সচেঞ্জ বুশরা মালয়েশিয়া এ সুযোগ নিচ্ছে।
ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্ল্যাটফর্মটি সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশে এখনও নতুন উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপ প্রকল্পে ঋণ বা অন্য কোনো অর্থায়ন পেতে সমস্যা হয়। এ অবস্থায় ভি-নেক্সট প্ল্যাটফর্মটি বিনিয়োগ আর্কষণের ভালো বিকল্প হতে পারে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য