ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিক নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইতালি। এতে বাংলাদেশিরাও আবেদনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে কবে থেকে আবেদন শুরু হবে এবং কোন খাতে কত শ্রমিক নেবে তার বিবরণ দেওয়া হয়নি।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারীর পর কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে কর্মী সংকট মোকাবিলা ও ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইতালিতে প্রবেশ বন্ধ করতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর তৃতীয় দেশ (নন-ইউরোপীয়) থেকে ৩ বছরে পর্যায়ক্রমে ৪ লাখ ৫২ হাজার শ্রমিক নেওয়ার একটি ঘোষণা দেয় দেশটির সরকার। তার ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে ১ লাখ ৩৬ হাজার শ্রমিক প্রবেশ করে। আর চলতি বছর প্রবেশের কথা রয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিকের; সেই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। ২০২৫ সালের জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার শ্রমিকের কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও বিগত বছরগুলোতে শ্রমিকদের দেশটিতে প্রবেশ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পায় দেশটির প্রশাসন। তাই চলতি বছরে এ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনেছে সরকার।
সম্প্রতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সরকারি বাসভবন ‘পালাজ্জো কিজি’ থেকে প্রকাশ হওয়া প্রজ্ঞাপনে নতুনভাবে শ্রমিক নিয়োগের নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ বছরেও ইতালিতে প্রবেশের জন্য এসব শ্রমিকদের ইতালিয়ান মালিকের সাহায্য নিতে হবে। অর্থাৎ সরকারের নির্ধারিত খাতের কোনো ইতালিয়ান মালিক তার প্রতিষ্ঠানের জন্য কোনো কর্মীকে নিয়োগ দিয়ে অন্য দেশ থেকে আনার জন্য স্থানীয় সরকারের কাছে আবেদন করবেন। সরকার ওই আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে ছাড়পত্র (নুল্লাওস্তা) দিলে, ওই নুল্লাওস্তা কর্মীর নিজ দেশে থাকা ইতালি দূতাবাসে পাসপোর্ট সহকারে জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করবে।
তবে এই নিয়মে গতবারের তুলনায় এ বছর বেশ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ইতালি সরকার। বিগত বছরগুলোতে কর্মীরা ইতালিতে প্রবেশের পর মালিক খুঁজে না পাওয়ায় বৈধভাবে আসলেও পরে অবৈধ হয়ে যেত। তাই এ বছর দেশটিতে প্রবেশের আগেই মালিকের সঙ্গে কর্মীর কাজের চুক্তি করতে হবে; যাতে ওই কর্মী দেশটিতে এসে সরাসরি কাজে যোগ দিতে পারে এবং বৈধভাবে বসবাস করতে পারে। এ ছাড়া এ বছর আবেদনের পর মালিকের সব কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে মালিকের ট্যাক্স, শ্রমিক সংখ্যা ও নতুন শ্রমিক প্রয়োজন কিনা এসব তথ্য গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানায় প্রশাসন। তবে যেসব মালিক বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শ্রমিক আনার জন্য আবেদন করবে, সেসব মালিক ও শ্রমিকদের ‘একটু বেশি’ যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে বিগত দিনে বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়ে ‘অনিয়ম খুঁজে পাওয়ার’ কথা বলছে ইতালির প্রশাসন।
যদি কোনো শ্রমিক অস্থায়ী বা সিজনাল ভিসায় ইতালিতে প্রবেশ করে আর পরে যদি তার কাজ চলমান থাকে; তাহলে সেই শ্রমিক এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পাবে। এক্ষেত্রে ওই শ্রমিককে অবশ্যই প্রথম কাজের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে নতুন করে কাজের চুক্তি নবায়ন অথবা অন্য মালিক দিয়ে চাইলেও এ চুক্তি করতে পারবে। এছাড়া এ বছর দেশটির বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখাশোনা করার জন্য অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটা বরাদ্দ করেছে সরকার।
এ বিষয়ে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা ভেনিস প্রবাসী কামরুল ইসলাম রিগ্যান বলেন, বিগত দিনে অনিয়মের কারণে বর্তমানে অনেকটাই ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকরা। আমাদের দেশের সরকারের উচিত এসব অনিয়ম বন্ধ করতে ইতালির প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা। এতে ইতালির সঙ্গে আমাদের শ্রমবাজার আরো দৃঢ় হবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য