-->

ডিমের দাম কমলেও

বেড়েছে মুরগির

হেলাল সাজওয়াল
ডিমের দাম কমলেও

নিত্যপণ্যের বাজারে উত্তাপ কিছুটা কমে এসেছে। ডিমের দাম কমে প্রতি ডজন গতকাল শুক্রবার ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। সরকারের অভিযান; শুল্ক ছাড় এবং আরও ডিম আমদানির ঘোষণায় দাম কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ডিমের দাম কমলেও বেড়েছে মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ৩০ টাকা এবং সোনালির দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে সবজির দাম কমেছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। চাল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার এনবিআর ডিমের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এ সুবিধা আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে। শুল্ক কমানোয় আমদানি পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম ১৩ টাকা ৮০ পয়সা কমবে। সরবরাহ বাড়বে। এর আগে মঙ্গলবার উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বুধবার থেকে বাস্তবায়ন হওয়া উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা; পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সে হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। তবে এই দামে কোথাও ডিম বিক্রি হচ্ছে না।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও নিউ মার্কেটসহ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা। যদিও পাড়া-মহল্লায় ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বিক্রি করছেন ১৬০ টাকায়। সেই হিসাবে দুই দিনের ব্যবধানে ডজনে ডিমের দাম কমেছে ৩০ টাকা। দুদিন আগেও খুচরায় প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। রাজধানীর শান্তি নগর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান পিন্টু দৈনিক ভোরের আকাশকে জানান, বাজারে সরকারে বিভিন্ন সংস্থার নিয়মিত অভিযান এবং ডিম সরবরাহ বাড়ানোর কারণে দাম কমছে। তিনি বলেন, আড়তদাররা ডিমের আকার হিসেবেও দামের তারতম্য করছে। ছোট বড় ডিম রয়েছে। ভালো ডিম আনতে গেলে আড়ত থেকেই ১২ টাকা দামে কিনতে হয়। চালানে সরকারি দাম লেখা থাকলেও শতকরা ২০-৩০ টাকা বেশি দামেই ডিম কিনতে হয় আমাদের।

নতুন করে আরও সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির খবর দাম কমার একটি বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, সরকার শুল্ক কমানোর কারণে আমদানি মূল্য কমবে। বাজারে দামও কমার কথা। তবে আমদানিকারকরা কতটুকু কমাবে, সেটি দেখার বিষয়। কারণ পাইকারিতে না কমলে খুচরায় দাম কমবে না।

সবজির দাম কিছুটা কমেছে: উত্তাপ ছড়ানো সবজির বাজার কমতির দিকে হলেও স্বস্তিদায়ক নয়। গত ক’দিনের তুলনায় বেশ কয়েকটি সবজির দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা কমেছে। তবে বেগুনের দাম আকাশ ছোঁয়া। গতকাল প্রতি কেজি কাঁকরোল ৮০-১০০, পেঁপে ৩০-৪০, মুলা ও পটোল ৬০-৭০, ঢেঁড়শ ৬০-৭০, বরবটি ১০০-১২০, গোল বেগুন ২০০, লম্বা বেগুন ১৪০, টমেটো ২০০, করলা ৮০-৯০, ধুন্দল ও ঝিঙে ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে বেশির ভাগ সবজির দর ১০০ টাকার বেশি ছিল। তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম অনেক বেশি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। শাকের দামও নাগালের বাইরে। লাল শাকের আঁটি ২৫-৩০, লাইশাক ও পুঁইশাক ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা।

ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩০০ টাকা। গরুর মাংসের কেজি কোথাও ৭০০, কোথাও ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চাল, ডালসহ অন্য নিত্যপণ্যের দাম আগের মতোই উচ্চমূল্যে রয়েছে। বাজারে কদিন আগে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি হওয়া সরু চাল এখন ৭২ থেকে ৭৪ টাকা। মধ্যবিত্তের চাল হিসেবে পরিচিত মাঝারি আটাশ চালের পাইকারি দাম ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে এবং গরিবের মোটা চাল ৫৫ টাকায় গিয়ে উঠেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রকাশিত নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার দরের ব্যাপারে কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, মিরপুর ১ কাঁচাবাজার, রামপুরা বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, কচুক্ষেত বাজার থেকে সংগ্রহ করা তথ্য বলছে, সম্প্রতি চাল-মাঝারি (পাইজাম/লতা), চাল মোটা (স্বর্ণা/চায়না/ইরি) দাম বেড়েছে।

তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ময়দা (প্যাকেট), সয়াবিন তেল (বোতল), মুগ ডাল (মানভেদে), অ্যাংকর ডাল, হলুদ (আমদানি) এর দাম কমেছে। কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী বাহার জানান, বন্যার কারণে মোটা চালের চাহিদা বেশি। সেই কারণে মোটা চালের দাম বেড়েছে। মিনিকেট চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে; তবে চিকন চালের দামও কিছুটা বেড়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকি অভিযানে মিলছে কারসাজির প্রমাণ। অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, শুধু ডিম নয়, প্রতিটি পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্রয়-বিক্রয়ের কোনো পাকা রশিদ, এমনকি পণ্য মজুতের রেজিস্টারও সংরক্ষণ করছেন না। অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত লাভে পণ্য বিক্রি করছেন। আর নেপথ্য থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণে অসাধু চক্রও সক্রিয়। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। ইতোমধ্যে এর সুফল আমরা পাচ্ছি; বাজারে ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে।

এদিকে বাজারের এমন পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারক ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের এ টাস্কফোর্সে দুজন করে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিও থাকবেন।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version