২০২৪ সালের প্রথম আট মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ১২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি ছিল ১৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন। ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৫৯ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের মধ্যে ৬১ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম।
চীনের পর ইইউতে পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে ইইউতে চীনা পোশাক রপ্তানি ৪ দশমিক ১০ শতাংশ কমে ১৫ দশমিক ৬২ বিলিয়ন হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন। আর বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারকদের মধ্যে তিনটি দেশ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া ও মরক্কোর প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। ইইউতে কম্বোডিয়ার পোশাক রপ্তানি ১২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের পোশাক রপ্তানি ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। মরোক্কোর পোশাক রপ্তানি ৬ দশমিক ০৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ বিলিয়ন। ইইউতে তৈরি পোশাকের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক তুরস্ক ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করেছে এবং আয় করেছে ৬ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন, যা গত বছর ছিল ৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে এহসান শামীম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে পোশাক ইউনিটের দাম কমেছে, যা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ। পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক অস্থির পরিস্থিতিও রপ্তানি প্রবণতা হ্রাসের আরেকটি কারণ। তিনি বলেন, ক্রমাগত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার কারণে কারখানাগুলো তাদের পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। সময়মতো কাঁচামাল পেতেও সমস্যায় পড়েছে। ফলে উৎপাদনে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ দিন বিলম্ব হচ্ছে।
বাংলাদেশে জুলাই ও আগস্টে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে উৎপাদন ও রপ্তানি চালানের গতি কমে যায়। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনের কারণে প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানিও মন্থর ছিল বলে তিনি জানান। শামীম বলেন, ব্যবসার বর্তমান অবস্থা অনুকূলে নয়, যা রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে এ খাতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। রপ্তানিকে পজিটিভ প্রবণতায় আনতে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে হবে।
রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির জন্য অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন। ক্রেতাদের আস্থা রাখতে হলে এ খাতে স্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই বলে মতো দেন তারা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখানোয় এটি অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থাকলেও রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানির বাধা দূর করা আমাদের গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত।
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্সা) তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক পোশাক আমদানিতে ৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে। আয় হয়েছে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ক্রেতারা অন্য দেশে অর্ডার স্থানান্তর করবে, যা বাংলাদেশের জন্য খুবই বিপজ্জনক হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকরাও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান খাত সংশ্লিষ্টরা।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য