রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে তড়িঘড়ি করেন তৎকালীন গভর্নর ফজলে কবির। ঋণ গ্রহীতাদের কেউ কেউ ইডিফের অর্থ বিদেশে পাচার করেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উঠে এসেছে। অন্যদিকে অনিয়ম উপলব্ধি করে গত বছর থেকে ইডিএফের আকার কমানো শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে ইডিএফের আকার হ্রাসকে সামনে রেখে ৭ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ দশমিক ৫১ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
ইডিএফ তহবিল থেকে ৪ শতাংশ সুদে সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা ১৮০ দিনের জন্য ঋণ পাচ্ছেন। তবে যে রপ্তানির বিপরীতে ইডিএফ সুবিধা নেওয়া থাকবে তার বিপরীতে রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহবিল (ইএফপিএফ) থেকে ঋণ সুবিধা মিলবে না।
দেশের পণ্য রপ্তানির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে রপ্তানিকারকদের ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কম সুদে ডলারে ঋণ সুবিধা দিতে ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় ইডিএফ। রিজার্ভ থেকে এই ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ ২৭০ দিন সময় পান উদ্যোক্তারা। সেই ইডিএফ তহবিলের আকার দীর্ঘ কয়েক বছর এক থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের ঘরে ছিল। ফজলে কবির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরেই ২০১৬ সাল থেকে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেতে থাকে আকার।
২০২০ সালে মার্চে করোনাকালে ব্যবসা বাঁচানোর নামে একই বছরের এপ্রিলে ইডিএফের আকার ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন করা হয়। সেই ধারা প্রায় দুই বছর অব্যাহত থাকে। ২০২২ সালে ইডিএফের আকার ৭ বিলিয়নে ডলারে উন্নীত হয়। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশে ডলার সংকট তীব্রতর হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ইডিএফ কমাতে জোর দেন। তার নির্দেশে ইডিএফ আকার ছোট হয়ে গত মে মাসে এর পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন। আর জনু শেষে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত জুলাইতে ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলারে। আর সরকারর পালাবদলের পরে আগস্ট শেষে ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। সেপ্টেম্বরে হয় ২ দশমিক ৭৭ বিলীয়ন ডলার। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ইডিএফের আকার দাঁড়ায় ২ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ থেকে ইডিএফের ঋণ পান রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনার পর বেশ বড় আকার ধারণ করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আকার কমাচ্ছে। ইডিএফের পরিবর্তে রপ্তানিকারকদের অন্যভাবে অর্থায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য