-->

গত মাসে ব্যাংকে ফিরলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
গত মাসে ব্যাংকে ফিরলো সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা

ধীরে ধীরে ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। আস্থাহীনতা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ব্যাংক থেকে হুমড়ি খেয়ে টাকা তুলেছেন বহু গ্রাহক। আর এ আস্থাহীনতার শুরু হয়েছিল দুর্বল ব্যাংক আর সবল ব্যাংকের তালিকা ঘোষণার পর। ব্যাংকগুলো অর্থ উত্তোলন সীমিত করে দেয়ার পর আস্থা আরও কমতে শুরু করে গ্রাহকদের।

এবি ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক হালিমা খাতুন। সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ টাকা তোলার জন্য চেক জমা দিলে মাত্র ৫ হাজার টাকা দিতে পারে ব্যাংকটি। নিজের সঞ্জয় করা টাকা প্রয়োজনের সময়ে হাতে না পেয়ে অনেকটা বিরক্তই হন গ্রাহক হালিমা খাতুন। এমনিভাবে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকার চেক জমা দিয়ে গ্রাহক মুকুল (ছদ্মনাম) তুলতে পারেন মাত্র ১০ হাজার টাকা। তিনি ব্যবসায়ী। ফলে অনেক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি। এসবই ঘটতেছিলো জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে।

ক্ষমতার পালাবদলে অনিশ্চয়তার মধ্যে অগাস্ট মাসে গ্রাহকরা হুমড়ি খেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তোলা শুরু করেছিলেন; আস্থার সেই সংকট কাটিয়ে এখন আবার তারা ব্যাংকে টাকা জমা রাখছেন।

ব্যাংকাররা বলেছেন, আমানতের বিপরীতে ও বন্ডে বিনিয়োগের উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি কিছু ‘দুর্বল’ ব্যাংক ঘিরে গ্রাহকদের মধ্যে যে আস্থাহীনতা শুরু হয়েছিল তার প্রভাব কমে আসায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। চলতি বছর অক্টোবর মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় জমা টাকার পরিমাণ আগের মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৪ হাজার ২০৯ কোটি টাকা বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে ব্যাংকের ফেরত এসেছিল ৮ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের বলেন, অক্টোবর মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। সরকার পতনের পর ১৫ অগাস্ট ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। আসলে তখন ব্যাংক খাত নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল। তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। যাদের দরকার ছিল তারাও টাকা তুলে নিয়েছেন, আবার যাদের টাকার দরকার ছিল না ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে তারাও টাকা তুলে নিয়েছিলেন। মুখপাত্র বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনা করলে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নেই। ইসলামী ধারার ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব দুর্বল ব্যাংকগুলোতে তারল্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ বলছেন, ব্যাংক খাত ‘অত্যন্ত সংবেদনশীল’ একটি জায়গা। সরকার পতনের পর আস্থার সংকট থেকেই টাকা তোলার হিড়িক পড়েছিল। এ কারণে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ তখন বেড়ে গিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম ও আমানতকারীদের নিশ্চয়তা দেওয়ার কারণে ব্যাংক খাতে আবার টাকা ফেরত আসছে। আস্থা ফেরার পাশাপাশি আমানতের সুদ বাড়ার বিষয়টি ব্যাংক খাতে গ্রাহক ফেরার পেছনে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন সিটিজেনস ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মাসুম। তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের মুনাফা ৮-১১ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এতে গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রাখতে আগ্রহ পাচ্ছে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version