‘শেখার জন্য প্রবেশ করো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও’- এ নীতিবাক্য নিয়ে ১৯৬৪ সালে বরিশাল বিভাগীয় শহরের দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতাল।
বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলের চিকিৎসা বিষয়ক উচ্চশিক্ষা দানকারী এ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। কিন্তু শেবাচিমে অধ্যাপকের অনুমোদিত পদের ৯০ শতাংশই শূন্য। ৪২ অধ্যাপকের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন; আর ২৯০ শিক্ষকের মধ্যে ১৮৫ জনই নেই। এই প্রকট সংকটে কাঙ্ক্ষিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পিছিয়ে পড়ছেন ব্যবহারিক দিক দিয়ে। এমনকি শিক্ষক সংকটের কারণেই শেবাচিমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা চালু করা যাচ্ছে না।
শেবাচিম প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই মেডিকেল কলেজে বিভিন্ন বর্ষে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষকের অনুমোদিত পদ মোট ২৯০টি। কিন্তু সেখানে আছেন ১০৫ জন। আর ১৮৫টি পদই শূন্য। অর্থাৎ মোট শিক্ষকের ৬৪ শতাংশ কলেজটিতে নেই। আবার অনেক বিভাগেই বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নেই। আরো জানা গেছে, শেবাচিমে অধ্যাপকের অনুমোদিত পদের ৯০ শতাংশই শূন্য।
৪২ অধ্যাপকের মধ্যে আছেন মাত্র চারজন। আবার সহযোগী অধ্যাপকের ৭১, সহকারী অধ্যাপক পদে ৫৩ এবং প্রভাষক, মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট পদে ৬১ শতাংশ জনবল শূন্য রয়েছে। এছাড়া ডেন্টাল বিভাগে ৩৮ শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ছয়জন প্রভাষক, মাইক্রোপ্যাথলজি বিভাগে ১৬ জনের স্থলে আছেন মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক ও পাঁচজন প্রভাষক। আর অ্যানাটমি, ফিজিওলজি, সার্জারি, মেডিসিন, নিউরো বিভাগসহ অন্য বিভাগে শিক্ষক সংকটের সংখ্যা আরো বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক শূন্যতার কারণে কাক্সিক্ষত পাঠদান ও ব্যবহারিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিজ্ঞ অধ্যাপক না থাকার কারণে পাঠদানে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পরীক্ষার ফলাফলে। এভাবে জোড়াতালি দিয়ে মেডিকেল কলেজে পড়া অসম্ভব।
আর শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষক শূন্যতার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী পাঠদান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক চাপের মধ্যে পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষকরা। বছরের পর বছর ধরে এমন শিক্ষক শূন্যতা থাকলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।
শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক এ কে এম আকবর কবির বলেন, শেবাচিমে শিক্ষকসহ অন্যান্য জনবল সংকটের কারণে অনেকটাই পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে আবার কোভিড পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ সময় করোনা পরীক্ষার জন্য আরটিপিসিআর ল্যাবেও সময় দিতে হচ্ছে শিক্ষকসহ জনবলদের। সব মিলিয়ে একটি অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে।
শেবাচিমের অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়টি দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এ কলেজটিতে শিক্ষক, অধ্যাপক ও জনবল সংকট বহুদিনের। আবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোয়ই অধ্যাপক না থাকায় কলেজে এমডি এবং এমএস কোর্স চালু করা যাচ্ছে না।
এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। পাশাপাশি শিক্ষকশূন্যতার বিষয়ে প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এভাবে শিক্ষকশূন্যতা নিয়ে চলা সম্ভব না।
মন্তব্য