-->
শিরোনাম
আসনের কোনো সংকট হবে না : ডা. দীপু মনি

ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রকাশিত হয়েছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল। ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলে এবার গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ কম। পাসের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ ফাইভের সংখ্যা।

 

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ শিক্ষার্থী। গত বছর এ পাবলিক পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পেয়েছিল ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। সে হিসাবে এবার জিপিএ ফাইভ বেড়েছে প্রায় ১ লাখ।

 

যে কারণে পছন্দের কলেজ বা ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনিসহ সংশ্লিষ্টরা।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর রেজাল্ট দেয়ার পর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়। তাদের চিন্তা থাকে ভালো কলেজে অর্থাৎ নামকরা কলেজে ভর্তি হওয়ার। এসব কলেজে ভর্তিতে প্রতিযোগিতা বেশি হয়। তাদের এই চিন্তাধারা বদলাতে হবে। তা না হলে অকারণে এসব দুশ্চিন্তা থেকেই যাবে।

 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির ক্ষেত্রে আসনের কোনো সংকট হবে না। মাধ্যমিকে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করে তার চেয়ে আমাদের আসন সংখ্যা বেশি রয়েছে। তাই মাধ্যমিকে পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও আসন খালি থাকবে।

 

এবারের মাধ্যমিকের ফলাফলে পাস করা ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থী, তাদের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন ও শিক্ষকদের জন্য দিনটি ছিল স্বস্তি আর আনন্দের। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের এসএসসিতে ৮৮ দশমিক ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ ছাড়া মাদরাসা বোর্ডের দাখিলে পাসের হার ৮২ দশমিক ২২ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৮৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারিগরি শিক্ষার দ্বার আমরা সবার জন্য উন্মুক্ত করছি। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বয়সের বাধা আমরা তুলে দিতে চাই। আশা করি, সবাই এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। দ্রæততার সঙ্গে এটি করতে পারলে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আর কোনো বয়সের বাধা থাকবে না।

 

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ শুরু করা হয়েছে। আগামীতেও ক্রমাগতভাবে এসব প্রশিক্ষণ চলবে। তিনি বলেন, অতিমারির মধ্যে অনলাইন শিক্ষায় আমরা এগিয়ে গিয়েছি। সফলভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ করানো সম্ভব হয়েছে। সব শিক্ষককে সরাসরি ও অনলাইনভিত্তিক নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া অব্যাহত থাকবে।

 

তিনি বলেন, বিজ্ঞান নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে ভীতি কাজ করে বলে মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী বেশি হয়। অঙ্ক পারি না, বিজ্ঞান বুঝি না এমন ধারণা অনেকের থাকে। আমাদের উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষকের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর দে ভোরের আকাশকে বলেন, পড়ালেখার ক্ষেত্রে কলেজ খুব বড় ভ‚মিকা রাখে, তা বলব না। যে যেখানে পড়াশোনা করুক, তাকে নিজ থেকে ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। ভালো পড়াশোনা করলেই কেবল ভালো ফল করা সম্ভব।

 

আমরা যেসব প্রতিষ্ঠানকে ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করি, সেখানে যে আসন থাকে সেখানে তো সবাইকে ভর্তি করা সম্ভব নয়। তার মানে এই নয় যে, তারা ভালো স্টুডেন্ট না। এ বিষয়ে অভিভাবকদের মনোভাব বদলাতে হবে।

 

তিনি বলেন, যত শিক্ষার্থী পাস করেছে আমার জানা মতে আসন সংখ্যা রয়েছে এর চেয়ে বেশি। তাই আসন সংকট হবে এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই।

 

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। পরে একে একে নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।

 

এ বছর সবচেয়ে বেশি পাসের হার যাশোর বোর্ডে। এই বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক শূন্য ১৭ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক শূন্য ৩, ময়মনসিংহে ৮৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ, সিলেটে ৭৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাস করেছে সিলেট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি কলেজে পর্যাপ্ত আসন থাকলেও ভালো কলেজের সংকট রয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থী। সেখানে আসন রয়েছে ২৪ লাখের বেশি। সেই হিসাবে বহু আসন খালি থেকে যাবে। মূলত নামিদামি কলেজের আসন পেতে ভর্তির মূল লড়াইটা হবে।

 

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে স্কুল ও কলেজ রয়েছে (একাদশ শ্রেণি রয়েছে) এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ২ হাজার ৭৭৮টি। ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্স কলেজসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি কলেজ রয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯টি।

 

এর বাইরে আড়াইহাজারের বেশি মাদরাসা রয়েছে। ২ হাজারের বেশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে এইচএসসি পড়ানো হয়। তাই কলেজ এবং আসনের কোনো সংকট নেই। তবে ভালো কলেজের সংখ্যা ৫০০-র বেশি নয়। সেখানে প্রতিযোগিতা হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version