মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: রেজাল্ট দেয়ার পর নতুন ক্লাসের নতুন বইয়ের অপেক্ষায় থাকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। একসময় তাদের এ অপেক্ষা দীর্ঘ ছিল। বেশিরভাগ সময় নতুন বই পেতে জানুয়ারি পেরিয়ে যেত। কখনো অপেক্ষা করতে হতো আরো দীর্ঘসময়। বাধ্য হয়ে পুরোনো বই দিয়ে ক্লাস শুরু হতো। বর্তমানে সেই চিত্র বদলে গেছে। এখন বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যায় নতুন বই।
বছরের প্রথম দিনই সারা দেশে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। চলতি বছর বই তৈরির সরমঞ্জামের দাম বাড়লে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যাতে এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। সরকারের লক্ষ্য রয়েছে বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দিতে। প্রত্যাশা পূরণের জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ছাপখানা ও বুক বাইন্ডাররা। নতুন বই তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা পৌঁছে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোয়। ইতোমধ্যে দেশের সব জেলায় নতুই বই পৌঁছে গেছে। বাকি ছিল লালমনিরহাট এবং চট্টগ্রাম। গতকাল শুক্রবার এ দুই জেলায়ও বই পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বছরের প্রথম দিনে ৮০ শতাংশের বেশি বই শিক্ষার্থীদের পৌঁছে যাবে। বাকি বই পেতে আরো ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে তাদের। অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারিরে মধ্যে শতভাগ বই পাবে শিক্ষাথীরা। এদিকে কিছু অঞ্চলে এখনই শতভাগ বই পৌঁছে গেছে। সেসব অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা বছরের প্রথম দিনই শতভাগ নতুন বই পাবে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা সবার ওপরে রয়েছে। সবার আগে শতভাগ বই পৌঁছে গেছে এসব অঞ্চলে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত মাধ্যমিকের ৮০ শতাংশ এবং প্রাথমিকের ৬০ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত হয়ে গেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে বই পাঠানো হচ্ছে। বাকি ছিল লালমনিরহাট এবং চট্টগ্রাম। সেখানেও বই পাঠানো হয়েছে। এরই মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে গেছে অনেক স্থানে। সবার আগে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। তাদের বই আগে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, যথাসময়ে বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দিতে আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তারাও চেষ্টা করে যাচ্ছে। এবার কাগজের সংকট ছিল। বিভিন্নভাবে আমরা তা জোগাড় করেছি। আমাদের চেষ্টায় কোনো ঘাটতে নেই। আশা করছি, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সবার হাতে শতভাগ বই শোভা পাবে।
২০১২ সাল থেকেই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিচ্ছে। এ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় সারা দেশে একযোগে বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে বই বিতরণ উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে মোট ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৭ হাজার ৮৩৩টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণের কথা রয়েছে।
এর মধ্যে প্রাইমারির (প্রাক-প্রাথমিক থেকে ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীসহ) মোট বই ৯ কোটি ৬৬ লাখ ৭ হাজার ২৪৫ কপি এবং মাধ্যমিকের জন্য ২৩ কোটি ৮২ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৮টি বই বিতরণ করা হবে। গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিকের সাড়ে ১৪ কোটি বই মাঠপর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং প্রস্তুত হয়েছে ১৭ কোটির বেশি বই। এছাড়া প্রাথমিকের ৬ কোটি বই মুদ্রণ ও বাঁধাই সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে ৯টিরও বেশি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য নিম্নমানের বই ছাপার অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নিম্নমানের বই ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো এনসিটিবিকে হস্তান্তর করার আগে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে প্রায় প্রস্তুত ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও ছাপানো ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। এনসিটিবি জানায়, গেøাবাল প্রিন্টিং অ্যান্ড ইক্যুইপমেন্ট, আমিন আর্ট প্রেস অ্যান্ড প্রিন্টিং, আলামিন প্রেস, সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, লিখন আর্ট প্রেস, হাওলাদার প্রেস, এসএস প্রিন্টার্স, নয়ন মনি এবং রিফাত প্রেসে ছাপানো ৫০ হাজার পাঠ্যবই ও বইয়ের ফর্মা কেটে বিনষ্ট করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে এসব বই কেটে ফেলা হয়।
শিক্ষা খাতে সরকারের অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দায় কাগজ, কালিসহ পুস্তক তৈরির সব উপকরণের দাম লাগামহীন। এমন পরিস্থিতিতেও শিক্ষাখাতকে অগ্রাধিকারে রেখে আগামী ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে কোমলমতি শিশুদের কথা বিবেচনা করে বছরের প্রথম দিনই তাদের হাতে বই পৌঁছে দিয়েছে। এমনকি করোনা মহামারির সময় এবং অর্থনৈতিক মন্দা সত্তে¡ও শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারির ১ তারিখে বই তুলে দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের অভাবে কাগজ সংকট চলছে কিছুদিন আগে থেকেই। এদিকে ডলার সংকট মেটাতে ভার্জিন পাল্প আমদানি করার সুযোগ পায়নি কাগজকল মালিকরা। ফলে রিসাইকেলের মাধ্যমে তৈরি কাগজে পাঠ্যবই ছাপার সুযোগ দেয়া হয়েছে মুদ্রণ মালিকদের। এ সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির মুদ্রণ মালিক সবচেয়ে নিম্নমানের কাগজে বই ছেপে সরবরাহের চেষ্টা করছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য