-->

অনিশ্চয়তা কেটেছে, সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে পাঠ্যবই

নিজস্ব প্রতিবেদক
অনিশ্চয়তা কেটেছে, সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে পাঠ্যবই

কাগজ সংকটকে কেন্দ্র করে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে যথাসময়ে পৌঁছে দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও তা কাটিয়ে উঠেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এনসিটিবি বলছে, গত বৃহস্পতিবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই ছাপার কাজ শেষ হয়েছে। কয়েকটি প্রেস বই ছাপার কাজ দেরিতে শুরু করায় তিন-চারটি উপজেলায় বই পৌঁছতে দেরি হচ্ছে, আজ শনিবারের মধ্যে এগুলোও পৌঁছে যাবে। আগামীকাল রোববার বই উৎসব করবে সরকার। এ উৎসবের মধ্য দিয়েই সারা দেশের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যবই তুলে দেবে সরকার। এরপর শুরু হবে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠদান। আড়ম্বরপূর্ণভাবে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই প্রকাশের নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বৃহস্পতিবার। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বই উৎসব উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিটি শ্রেণির একজন করে শিক্ষার্থীকে এক সেট করে বই দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করবেন তিনি। পরদিন রোববার আগামীকাল মাধ্যমিক স্তরের কেন্দ্রীয় বই উৎসব হবে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। আর কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক স্তরের বই উৎসব হবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। ডলার ও কাগজ সংকটের কারণে সরকারের এ উৎসব আয়োজন ব্যর্থ হতে পারে এমনটি বারবার আলোচনায় এলেও শেষ পর্যন্ত সংকট কাটিয়ে বই উৎসব করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের সব উপজেলায় বই পৌঁছে গেছে। পৌঁছে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়ও।

 

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বই নিয়ে কোনো সংকট আর নেই। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাধ্যমিকে ৮০ শতাংশের বেশি বই প্রস্তুত ও সরবরাহ করা হয়েছে। কোনো উপজেলা বই পেতে বাকি নেই। যেখানে ১০০ সেট বই যাওয়ার কথা সেখানে হয়তো ৮০ থেকে ৮২ সেট বই গেছে। প্রাথমিকে এ মুহূর্তে ৮০ শতাংশের কম আছে। তবে শুক্রবার যে পরিমাণ বই যাচ্ছে, তাতে ৮০ শতাংশ বই শনিবারের মধ্যে পৌঁছে যাবে।’

 

অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘আড়ম্বরপূর্ণভাবে সারা দেশে পাঠ্যপুস্তক উৎসব হবে। করোনার কারণে যেহেতু গত দুই বছর উৎসব হয়নি। এ বছর আমরা প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জানিয়ে দিয়েছি আড়ম্বরপূর্ণভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বই দেয়ার জন্য।’ রাজধানীর উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ জহুরা বেগম বলেন, ‘আমরা বই পেয়ে গেছি। দুয়েকটি বই আজও পাইনি। তবে কালকের মধ্যে (শনিবারের) পাব বলে জেনেছি। করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের এ সময়ে বই পাওয়া নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা ছাপিয়ে আমাদের হাতে সরকার বই পৌঁছে দিতে পেরেছে।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যক্ষ বলেন, ‘ডলার সংকট, কাগজ প্রস্তুতের ভার্জিন পাল্প আমদানি না করে দেশে রিসাইকেল করে কাগজ তৈরি করে বই সরবরাহ করা হয়েছে। কাগজ অনুযায়ী বইয়ের মানও ভালো। তবে ভার্জিন পাল্পের তৈরি কাগজের বই ছাড়াও ভালো বই হতে পারে, তা এবার বোঝা গেছে। মাত্র এক বছর ব্যবহার করার জন্য বেশি দামি কাগজ কিনে বই ছাপার প্রয়োজন নেই। তা এবার প্রমাণ হলো।’

 

৮০ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক ছাপা শেষ : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে সাড়ে ৩৪ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি মিলিয়ে এ স্তরে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার এবং মাধ্যমিক স্তরে স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি মিলিয়ে ২৪ কোটি ৬৩ লাখ ১০ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই ছাপা হচ্ছে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭ কপি। এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম নিশ্চিত করেন এসব বইয়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ বই বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাপা শেষ হয়েছে। বাকি বই দ্রুত ছাপা হবে। বই উৎসব আড়ম্বরেই সম্ভব হবে।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version