রাজশাহীতে বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র এবং প্রবেশপত্র তৈরি করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বুধবার দুপুরে আরএমপি সদর দপ্তরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) বিজয় বসাক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
এ সময় আসামির কাছ থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জীবন-বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি উদ্ধার হয়। গ্রেপ্তারকৃত নয়ন ইসলাম (২৫) রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অচিনঘাট এলাকার মো. আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া নিউজ২৪.কম-এর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, দেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যগণ নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ১০ম তলায় অবস্থান করছে।
এখান থেকেই তারা নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তিচ্ছু ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি এবং চুক্তি মোতাবেক অর্থের জিম্মা হিসাবে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহসহ প্রাথমিক খরচ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ টাকা সংগ্রহ করে।
বিষয়টি আরএমপির পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমানের নজরে আসে। তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে রাজশাহী মহানগর গোয়ন্দা পুলিশকে (ডিবি) নির্দেশ প্রদান করেন। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো. মশিয়ার রহমান, এসআই মো. আশরাফুল ইসলাম ও তার টিম জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেন।
পরবর্তীতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম নগরীর পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান পরিচালনার জন্য গেলে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। ফ্ল্যাটের মালিকের মাধ্যমে জানা যায়, ভাড়াটিয়ার নাম মো. নয়ন ইসলাম।
সে নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করত। বাড়ির মালিক আরো জানান, নয়ন নিজেকে কখনো ডাক্তার, কখনো সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রীদের সাথে যোগাযোগ করে। অনেকে এখানে আসা-যাওয়া করে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাকের নির্দেশে গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে আসামি নয়নসহ অন্য সদস্যরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় বিশেষ পত্র প্রেরণ করেন।
কিন্তু আসামি নয়ন এর পূর্বেই ভারতে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আসামি মো. নয়ন ইসলাম গত ৬ মার্চ বিকেলে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় ওই পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল ইমিগ্রেশনে পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন।
বিষয়টি তারা অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস), আরএমপি, রাজশাহীকে জানান। গত ৭ মার্চ বিকেলে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশক্রমে গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানায় উপস্থিত হয়ে আসামি নয়নকে হেফাজতে নেয়।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য