-->
শিরোনাম
প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন

প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

শিপংকর শীল
প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

শিপংকর শীল: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সম্মিলিত পূর্ণাঙ্গ জ্যেষ্ঠতা তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কুমিল্লা, গোপালগঞ্জ, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন জেলার কিছু শিক্ষক এই অনিয়মের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০০৩ সালে চাকরিতে যোগদান করা শিক্ষকরা এই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ। এই অনিয়ম দূর করতে এরই মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

 

এই অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, সহকারী শিক্ষকদের সম্মিলিত পূর্ণাঙ্গ জ্যেষ্ঠতা তালিকা প্রকাশে অনিয়ম প্রকাশ পেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

জানা গেছে, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের সাতেশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুর সাত্তার চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৩ সালের ১৭ জুন। উপজেলাভিত্তিক তালিকায় তার গ্রেডেশন ক্রম ৫৫। আবার একই উপজেলার উদাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মোবারক উল্লাহ চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৪ সালের ১৪ জানুয়ারি। ছয় মাস পরে চাকরিতে যোগদান করলেও মোবারক উল্লাহর গ্রেডেশন ক্রম ৫৪। এছাড়াও একই উপজেলার খিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর। তার গ্রেডেশন ক্রম ৫৩। অন্যদিকে ফেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আবু হানিফ যোগদান করেন একই বছরের ২২ নভেম্বর। অথচ তার গ্রেডেশন ক্রম ৫২। চার দিন পরে চাকরিতে যোগদান করেও আছেন ফখরুল ইসলামের চেয়ে এগিয়ে।

 

কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের বিনয়ঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোফাজ্জল হোসেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০০৩ সালের ১৭ জুন। তার গ্রেডেশন ক্রম ৫১। অন্যদিকে আশিয়াদারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমীর কুমার ভৌমিক চার দিন পরে একই বছরের ২১ জুন চাকরিতে যোগদান করেও তার গ্রেডেশন ক্রম ৫০। কুমিল্লার বশৈয়া রেজি. বে. প্রা. বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিখিল চন্দ্র দেবনাথ ছয় মাস পরে ২০০৩ সালের ১৬ নভেম্বর যোগদান করলেও তার গ্রেডেশন ক্রম ৪৯।

 

একইভাবে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার উত্তর হিরন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবাদুল হক মৃধা চাকরিতে যোগদান করেছেন ২০০১ সালের ২১ জুন। তার গ্রেডেশন ক্রম ৮৯। তার তিন দিন পর একই বছরের ২৪ জুন যোগদান করা খাগড়াবাড়ী-২৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক দীপা রানী সরকারের গ্রেডেশন ক্রম ৮৮।

 

একই উপজেলার মদনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা কানিজ ফাতিমার এক দিন পর জাঠিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নমিতা মণ্ডল চাকরিতে যোগদান করেন। কানিজ ফাতিমা ২০০৩ সালের ১৮ জুন আর নমিতা মণ্ডল এক দিন পর ১৯ জুন চাকরিতে যোগদান করেন। অথচ কানিজ ফাতিমার গ্রেডেশন ক্রম ৯১। অন্যদিকে নমিতা মণ্ডলের গ্রেডেশন ক্রম ৯০। ১৯ জুন যোগদান করা আরেক শিক্ষক ভুতেরবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান মীরের গ্রেডেশন ক্রম ৯৮। আর ২১ জুন যোগদান করা দ. হিরন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলামের গ্রেডেশন ক্রম ৯৭।

 

বর্ষাপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. টুটুল বিশ্বাস চাকরিতে যোগদান করেছেন ২০০৩ সালেল ১৯ নভেম্বর। ভুতেরবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান মীর, দ. হিরন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম- এই দুই শিক্ষকের যোগদানের পাঁচ মাস পরে চাকরিতে যোগদান করা মো. টুটুল বিশ্বাসের গ্রেডেশন ক্রম ৯৬। অথচ আশরাফুল ইসলাম ও কামরুজ্জামান মীরের গ্রেডেশন ক্রম ৯৭ ও ৯৮। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ৬০১ জন সহকারী শিক্ষকের সম্মিলিত পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানেও একই রকম অনিয়মের অভিযোগ চোখে পড়ে।

 

এসব অনিয়ম তুলে ধরে প্রতিকারের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মনোহরদী উত্তর চালাকচর স. প্রা. বি. সহকারী শিক্ষক মো. সাফিউল বাসার মেহেদী, পশ্চিম চরমান্দালিয়া স. প্রা. বি. সহকারী শিক্ষক এস এম খায়রুল কবি, মনোহরদী হিতাশী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম। তারা নিজেদের ২০০৩ সালে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডেশন তালিকায় সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version