রুদ্র মিজান, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে: শিক্ষাব্যবস্থাসহ নানা কারণে সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের পছন্দের দেশ অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিখ্যাত এই দেশ। আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্রদ্বীপের দেশ হিসেবেও এর প্রতি আগ্রহের শেষ নেই। এই দেশে বিচিত্র সংস্কৃতির ছোঁয়া পান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধাও। এসব কারণেই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের অন্যতম গন্তব্য এখন অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন, মেলবোর্ন ও সিডনিতে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয়েছে শিক্ষার্থীদের। তারা জানিয়েছেন এসব তথ্য। সেইসঙ্গে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আহ্বান করেছেন লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজের জন্য অস্ট্রেলিয়াকে বেছে নিতে। বাংলাদেশিদের জন্য সেখানে রয়েছে সম্ভাবনার হাতছানি। গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় নথিভুক্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৭ হাজার ২৫৪ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া সরকারের শিক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর অস্ট্রেলিয়াতে নথিভুক্ত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭১ জন। ২০২১ সালে এই পরিসংখ্যান ছিল ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৪৯।
গত বছর নথিভুক্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে রয়েছে চীনের ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫১৭, ভারতের ১ লাখ ৩ হাজার ২০০, নেপালের ৫৭ হাজার ১৮২, কলম্বিয়ার ২২ হাজার ৬৬২, ভিয়েতনামের ২২ হাজার ৫২১, থাইল্যান্ডের ১৯ হাজার ৩৬২, ব্রাজিলের ১৯ হাজার ৫৭, পিলিপাইনের ১৭ হাজার ৯৭৬, ইন্দোনেশিয়ার ১৬ হাজার ৯১৪ ও পাকিস্তানের ১৫ হাজার ৮৭৫ শিক্ষার্থী। এছাড়া বিশ্বের নানা দেশের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছেন অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অস্ট্রেলিয়ার ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছে ২৬ হাজার ৫৯০, মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২ হাজার ১৪০, কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৫৯৮, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ হাজার ১৬৬, নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ হাজার ১৩২, উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ৩৬০, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ হাজার ২৭৮, কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ হাজার ৫১৯, ম্যাককুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজার ৬৯, ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনিতে রয়েছে ১০ হাজার ৫৪ জন।
শিক্ষার্থীরা জানান, অস্ট্রেলিয়ার সরকার উচ্চ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী বা কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে গতবছর নথিভুক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬১ হাজার ২৪৭ শিক্ষার্থী।
অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীদের জন্য জীবনযাত্রার ব্যয় খুব বেশি নয়। তবে কোর্স ফি অনেকটা ব্যয়বহুল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার ধরন এবং সময়কাল নির্ভর করে শিক্ষার ব্যয় পরিবর্তিত হয়। অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি করার সুযোগ আছে। ব্যাচেলর পর্যায়ে বছরে ১৫ হাজার ডলার থেকে ৩০ হাজার ডলারের মতো ব্যয় হয়। মাস্টার্স পর্যায়ে বছরে ২০ হাজার ডলার থেকে ৩৭ হাজার ডলার। এ ছাড়া পিএইচডি পর্যায়ে ব্যয় হবে ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ডলার। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পূর্বে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়া জরুরি। অস্ট্রেলিয়ার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনকারী স্নাতকোত্তর পড়তে চাইলে আইইএলটিএস-এ ন্যূনতম ৬ পয়েন্ট থাকতে হবে। তবে আবেদনকারী ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষা দক্ষতার প্রমাণের প্রয়োজন হয় না।
অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অর্ক হাসান জানান, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রেলিয়া দারুণ এক গন্তব্য। অস্ট্রেলিয়ার চিকিৎসাসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা অনেক ভালো। বৈষম্যহীন পরিবেশ ও মেধাভিত্তিক কাজের সুযোগ রয়েছে সেখানে। অস্ট্রেলিয়া উন্নত জীবন ও পড়াশোনার নিশ্চয়তা দেয়। সর্বশেষ টাইমস হায়ার এডুকেশন ও কিউএস র্যাঙ্কিং অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গ্লোবাল র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ একশর মধ্যে রয়েছে। শুধু এশিয়ার শিক্ষার্থীদের কাছেই নয়, ইউরোপের অনেক দেশের শিক্ষার্থীর কাছেও এখন অস্ট্রেলিয়া জনপ্রিয়।
মেলবোর্নের আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন অলিভ আহমেদ। তিনি বলেন, এটি বিশ্বের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠক্রম গবেষণাকেন্দ্রিক। শুধু পিএইচডি নয়, মাস্টার্সেও শিক্ষার্থীদের গবেষণা সংক্রান্ত কাজ করতে হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখন ফুল টাইম কাজ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। করোনার পূর্বে বেঁধে দেয়া সময়ের বেশি কাজ করতে পারতেন না তারা। প্রতি ঘণ্টায় সর্বনিম্ন ২৫ ডলার আয় করা যায় এখানে। শিক্ষার্থীরা এখানে শুরুতে অস্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি পান। পরবর্তীতে তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়। অস্ট্রেলিয়ায় থেকে যেতে চাইলে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে বলে জানান অলিভ। তিনি বলেন, পিআরের পরবর্তী দুই থেকে চার বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার পাসপোর্ট লাভের সুযোগ রয়েছে। সুপারশপ, কারখানা, পেট্রোলপাম্প, রেস্তোরাঁসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ রয়েছে এখানে।
ব্রিসবেনের একটি শপে কাজ করেন পুরান ঢাকার আসিফ। ব্রিসবেনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার স্ত্রী। তিনি এসেছেন ডিপেনডেন্ট ভিসায়। আসিফ জানান, শুরুতে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে তা সহজ হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ায় পণ্যের দাম একটু বেশি, আয়ও বেশি। ভার্সিটিগুলো তাদের শিক্ষার্থীদের অনেক সহযোগিতা করে।
সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষা ও বসবাসের জন্য অস্ট্রেলিয়া অনেক সুন্দর ও ভালো একটি দেশ। অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি নিউ সাউথ ওয়েলসে। ওই প্রদেশে রয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৩ শিক্ষার্থী।
ভোরের আকাশ/আসা
মন্তব্য