-->
শিরোনাম
দ্বিতীয় দফার অবরোধ

আতঙ্কে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

শিপংকর শীল
আতঙ্কে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা

শিপংকর শীল: বিএনপি জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফা অবরোধের শেষ দিন সোমবারও জনমনে বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করে আতঙ্ক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে হ্রাস পায় উপস্থিতির হার। দূরপথের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পাঠাতে চায় না অভিভাবকরা। বন্ধ থাকে অভ্যন্তর্রীণ ক্লাস পরীক্ষা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

মো. রহিম নটর ডেম কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র। বাবার সঙ্গে মগবাজার থেকে কলেজে যাচ্ছেন। তার বাবা মো. মামুন ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ। রাজনীতি নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ নেই। ডাল ভাত খেয়ে ছেলেকে মানুষ করার কথা ভাবছি। কিন্তু বর্তমানে দফায় যেভাবে অবরোধে গাড়ি পুড়ানো হচ্ছে তাতে আমরা ভয়ে আছি। এখন ২০১৪ -২০১৫ সালের কথা মনে পড়ছে। আমরা ২০১৪-২০১৫ সালের মতো ঘটনা আর চাই না। আমরা এর অবসান চাই।

 

তেমনি একজন অভিভাবক নারগিছ আক্তার। মেয়েকে নিয়ে মোহাম্মদপুর থেকে ঝিগাতলা যাচ্ছেন নারগিস আক্তার। মোহাম্মদপুর থেকে বাসে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর স্কুলে আসার সময় বাসের হেলপার জানালা বন্ধ করে দিয়ে বলল, আপা অবরোধ চলছে। হঠাৎ কেউ এসে আগুন দিতে পারে। এ কথা শুনে মেয়েরা ভয়ে আমার কোলের ভেতর মাথা দিয়ে দিল। পুরোটা পথ এভাবেই আসছি। এগুলো তো কেউ দেখবে না। আমার সন্তানের কিছু হলে আমারই ক্ষতি যাবে। কোনো দল দায় নেবে না, স্কুলের লোকজনও দেখবে না। কথাগুলো বলছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর স্কুলের অভিভাবক নারগিস আক্তার। তার একমাত্র মেয়ে পিংকি আক্তার।

 

সে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সোমবার সকালে মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে এভাবেই অবরোধে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অভিজ্ঞতা জানান নারগিস আক্তার।

 

তার পাশেই দুই সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. জসিম উদ্দিন। তার দুই ছেলে বীরশ্রেষ্ঠ মুিন্স আব্দুর স্কুলের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেলিতে পড়ে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, এমন একটা সময়, বাচ্চাকে স্কুলে না আনলেও অনেক পিছিয়ে যাবে। রিভিশন চলছে। কেমন প্রশ্ন হবে সেটাও এখন স্কুলে না এলে বুঝতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা মোহাম্মদিয়া হাউজিং এলাকা থেকে আসি। রাস্তাটা নির্জন। শুনেছি মাঝে মধ্যে হঠাৎ ওই এলাকায় অবরোধকারীরা বাসে ভাঙচুর চালায়। হঠাৎ কয়েকজন এসে ভাঙচুর চালিয়ে চলে যায়। পুলিশ তো আর সব জায়গায় থাকে না। বাচ্চারা এগুলো দেখলে, শুনলেই ভীতিতে পড়ে যাবে। তখন আর স্কুলে আসতে চাইবে না।

 

এদিকে দ্বিতীয় দফায় বিএনপির অবরোধের দ্বিতীয় দিনে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। তৃতীয় শ্রেণির ‘ঝ’ শাখায় মোট শিক্ষার্থী ৭০ জন। গতকাল সোমবার ক্লাসে এসেছে মাত্র ২৮ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির আরেকটি শাখায় ৭১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে এসেছে ৩১ জন। প্রভাতি শাখার অধিকাংশ শাখায় উপস্থিতি অর্ধেকের কম। তবে ক্লাসে কম উপস্থিতি নিয়ে স্কুলটির কোনো শিক্ষক কথা বলতে রাজি হননি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কেমন উপস্থিতি, তার হিসাব আমি এখনো জানি না। আগে হিসাবটা দেখি। তারপর বলা যাবে।

 

তবে ভিকারুননিসার প্রধান শাখা এবং বসুন্ধরা শাখায় খোঁজ নিয়ে ছাত্রীদের প্রায় স্বাভাবিক উপস্থিতির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়, সপ্তবর্ণ বিদ্যানিকেতনসহ ৮-১০টি স্কুলে খোঁজ নিয়ে ‘ভালো’ উপস্থিতির তথ্য জানা গেছে। তবে অভিভাবকরা বলছেন তারা বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই সন্তানদের স্কুলে নিয়ে আসছেন।

 

উলন রোডের সপ্তবর্ণ বিদ্যানিকেতনে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আজিম হোসেনের মা রোকসানা আকতার বলেন, আগের দফায় হরতাল-অবরোধে বাচ্চাকে স্কুলে আসতে দেইনি। এক সপ্তাহ স্কুল করেনি। এখন আবার অবরোধ। এভাবে কতদিন চলবে কে জানে! এজন্য আজ বাচ্চাকে স্কুলে আনলাম।

 

রামপুরা একরামুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদ খান ভোরের আকাশকে বলেন, গত সপ্তাহে হরতাল-অবরোধে স্কুলে উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। এ সপ্তাহের শুরুতে আজ আবার অবরোধ। তবে আজ আমাদের উপস্থিতি মোটামুটি ভালো। ৮০-৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সব ক্লাসে উপস্থিত রয়েছে।

 

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর অবরোধে কিন্ডারগার্টেনগুলোতে কোনো প্রভাব পড়েনি। সীমিত শিক্ষার্থী হওয়ায় উপস্থিতিও ভালো। কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আনা-নেয়ার জন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বাসার আশপাশের কিন্ডারগার্টেনে শিশুদের ভর্তি করেন অভিভাবকরা। ফলে বাসা থেকে কাছে হওয়ায় নিয়মিত সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন তারা।

 

বর্ণমালা আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রিন্সিপাল জোসনা রাণী মল্লিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের ছাত্র-ছাত্রী কম। প্রতি ক্লাসে আমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করি। আশপাশে যারা থাকেন তারাই বেশি এখানে। ওদের আসা-যাওয়ায় কোনো সমস্যা হয় না।

 

তিনি বলেন, আজ আমাদের চতুর্থ শ্রেণিতে ১৬ জন শিক্ষার্থীর সবাই উপস্থিত। তৃতীয় শ্রেণিতে সাতজনের মধ্যে ছয়জন এসেছে। আরেকজন অসুস্থ। এভাবে সব ক্লাসেই প্রায় শতভাগ উপস্থিতি রয়েছে। অবরোধ বলেন, হরতাল বলেন- আমাদের এখানে এগুলোর প্রভাব নেই।

 

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্কুলের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, আমরা ২০১৪ - ২০১৫ সালে বিএনপি জামায়াতের হরতাল অবরোধে কিভাবে মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে সেটা খবরের কাগজ ও পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি । এখন বাস্তবে দেখছি। প্রতিনিয়ত আতঙ্কে আছি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version