-->

টিসিবির লাইনে শিক্ষার্থীরাও

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
টিসিবির লাইনে শিক্ষার্থীরাও

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। কম দামে পণ্য পেতে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক সেলের লাইনে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের সঙ্গে এই লাইনে শামিল হচ্ছেন বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় দেখা যায়, টিসিবি থেকে পণ্য কিনতে দীর্ঘ লাইন ধরেছেন সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের পাশাপাশি পুরান ঢাকায় মেসে থাকা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছিলেন এই লাইনে।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর ৫০টি স্থানে ফ্যামিলি কার্ড ছাড়া বিশেষ ট্রাক সেলে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য থাকে। তবে অধিকাংশ জায়গায়ই নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত থাকেন, যারা পণ্য কিনতে পারেন না। টিসিবির এসব পণ্যের মধ্যে লিটারপ্রতি ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, এক কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চাল ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় কেনা যায়। এই চার পণ্য কিনতে একজন গ্রাহককে দিতে হচ্ছে ৫৯০ টাকা। খুচরা বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে লাগে প্রায় ১ হাজার টাকার মতো। অর্থাৎ, টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে অন্তত ৪শ টাকার বেশি সাশ্রয় হয় ক্রেতাদের।

পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মেসে থাকেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসান। তিনি বলেন, সরকার পতনের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেমন ছিল এখনও তেমন। বরং কিছু কিছু পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। এত বেড়েছে যে দোকান থেকে ক্রয় করে খাওয়াটাই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি টিসিবির পণ্য কেনার।

কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী এনামুল হক বলেন, আগে মেসে তিন হাজার টাকার মধ্যে তিনবেলার খাবার হয়ে যেতো। এখন চার হাজার ছুঁয়ে গেছে। টিসিবিতে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে তেল, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। পরে মেসের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সপ্তাহে অন্তত দুবার টিসিবির ট্রাক থেকে মালামাল কিনবো। এতে কিছু টাকা সাশ্রয় হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী বলেন, আমরা একসঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ জন মেসে থাকি। কমবেশি সবারই আর্থিক সমস্যা আছে। তাই যে যেভাবে পারছি খরচ বাঁচানোর উপায় বের করছি। আমাদের মেস মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে সপ্তাহে একবার একজন টিসিবির লাইন থেকে বাজার করবে। আজকে আমার বাজার ছিল। ক্লাস মিস করে এক দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মেসের বাজার করলাম।

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে যে দামে পণ্য কেনা যায় সেই, একই দামে যদি দোকানেও পাওয়া যেতো তাহলে আর বাড়তি কষ্ট করতে হতো না। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে অনুরোধ, যাই করেন আর না করেন, অন্তত দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ মানুষের নাগালে আনেন। নয়তো গ্রামাঞ্চল থেকে এসে মেসে থেকে পড়াশোনা করা আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য আরও কষ্টসাধ্য হবে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) থেকে সাধারণ মানুষ কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে কেবল চাল, ডাল, আলু এবং ভোজ্যতেল কিনতে পারেন। এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় আর কোনোকিছুই বিক্রি হয় না। এবার ক্রেতারা চাল-ডালের পাশাপাশি টিসিবিকে মাছ-মাংস এবং সবজি বিক্রির দাবিও জানান।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version