-->

বিজয় দিবসের কনসার্টের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন তাপস

অনলাইন ডেস্ক
বিজয় দিবসের কনসার্টের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন তাপস

আওয়ামী লীগের তাবেদারি করে একের পর এক কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন গান বাংলার কর্নধার ও সঙ্গীতশিল্পী কৌশিক হোসেন তাপস। শেখ হাসিনার পরতেন পর বেরিয়ে আসছে মিডিয়া মাফিয়া হিসেবে পরিচিত তাপসের কুকীর্তি। প্রভাব খাটিয়ে সংগীতাঙ্গনকে যেভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন, তা নজিরবিহীন।

তাপসের স্ত্রী ফারজানা মুন্নি ছিলেন শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ান। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতার সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। সেটাকেই কাজে লাগান তাপস। স্ত্রীর কারণে হয়ে ওঠেন ক্ষমতাবান। প্রভাব বিস্তার করেন সংস্কৃতি অঙ্গনে। আওয়ামী লীগ সরকারের সব থেকে বড় প্রজেক্ট ছিল জয় বাংলা কনসার্ট। শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ৭ মার্চের ভাষণ উপলক্ষে এই কনসার্ট আয়োজন করা হতো। পুরো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন তাপস। এ থেকে কোটি কোটি টাকা ঘরে তোলেন তিনি। সূত্র বলছে, শিল্পীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ নিজের পকেটে ভরতেন।

শুধু জয় বাংলা কনসার্টই না বিজয় দিবস উপলক্ষে হাতিরঝিলে হওয়া মাসব্যপী অনুষ্ঠান থেকেও তাপস বাগিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের সহয়তায় অনুষ্ঠানটি করেন তাপস। এ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। প্রতিদিন অনুষ্ঠানের বাজেট ধরা হয় ২ কোটি টাকা। মেয়র আতিকের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিতে বাধ্য করেছিলো তাপস।এমনকি ওই অনুষ্ঠানে সংকটে থাকা কয়েকটি ব্যাংককেও বিজ্ঞাপন দিতে বাধ্য করেন মেয়র আতিক। বিজয় দিবসের ওই অনুষ্ঠানে প্রতিদিন মন্ত্রী থেকে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা উপস্থি থাকতেন। যে অনুষ্ঠানটি গান বাংলা টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হতো। এজন্য গান বাংলা টিভি সম্প্রচার স্বত্ত্ব হিসেবে মোটা অংকের টাকা নিতো।

শুধু প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গেই তাপসের সম্পর্ক ছিলো না আলোচিত-সমালোচিত যুব মহিলা লীগের পাপিয়ার সঙ্গেও ছিলো তার সু-সম্পকর্। গুলশান-বনানীতে এসকর্ট বাণিজ্যের অন্যতম মূল হোতা কৌশিক হোসেন তাপস। পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর রিমান্ডে তাপসের নাম স্বীকার করে। এছাড়া বেশ কয়েকবছর আগে তাপসের ঘনিষ্টজন মডেল পিয়াসাও তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কর ফাঁকি দিয়ে গানবাংলার নাম করে ইউক্রেন থেকে নারী এনে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি, আন্তর্জাতিক সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মনোরঞ্জনের জন্য পাঠাতেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুইবার দেশটির কয়েকজন নারীকে আটকে দিয়েছিল পুলিশ। তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থাকা এক কর্মকর্তাকে ফোন করে ইমিগ্রেশন করিয়ে নেন।

২০২২ সালে যখন সাবেক পর্নো তারকা সানি লিওনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, তখন তা তোয়াক্কা না করে তাকে ঢাকায় আনেন। এতে পরোক্ষ সহযোগিতা করেন দরবেশবাবা। মেয়ের বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আনা হয়েছে বললেও মূল উদ্দেশ্য ছিল রাঘব-বোয়ালদের মনোরঞ্জন। বলিউড নায়িকা নার্গিস ফাখরিও তার হাত ধরে ঢাকায় এসেছিলেন। ওই সময় কলকাতার অভিনেত্রী নুসরাত জাহান, মিমি চক্রবর্তীরা এসেছিলেন। গানবাংলায় রাতভর আড্ডা দিতেন। মদের আসর বসাতেন। সেখানে উপস্থিত থাকতেন অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।

তাপসের সঙ্গে আর্থিক খাতের মাফিয়া সালমান এফ রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। তার ফেসবুকে ঢুঁ মারলে দুজনের হাস্যজ্জ্বল ছবিও চোখে পড়বে। বিদ্যুৎখাতের মাফিয়া সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গেও ছিল তাপসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সাবেক বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তাপস বাগিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। এত কিছুর পরও তাকে আইনের আওতায় আনা যায়নি। বরং ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া প্রতিবেদনের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version