সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচিত-সমালোচিত ‘সেন্সর বোর্ড’ প্রথা ভেঙে ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড’ সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি। মুক্তি প্রতীক্ষিত দুটি ছবি দেখার মাধ্যমে যার আনুষ্ঠানিক শুরু হয়েছে গতকাল সোমবার।
প্রথম দিনে বোর্ডের সূচিতে রয়েছে ‘ভয়াল’ ও ‘রাজকুমারী’। বোর্ডের অন্যতম সদস্য নির্মাতা-অভিনেতা-প্রযোজক খিজির হায়াত খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে কাজটি আমরা শুরু করতে যাচ্ছি তা অত্যন্ত কঠিন।একটু সময় লাগবে বিধিগুলো সংস্কার করে চলচ্চিত্র-বান্ধব করতে। চলচ্চিত্রে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। আপাতত সিনেমা হলে যেন চলচ্চিত্রগুলো নিয়মিত মুক্তি পেতে পারে, সেদিকে নজর দিচ্ছি আমরা।
চলচ্চিত্রকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলচ্চিত্র ‘সার্টিফিকেশন বোর্ড’ নামকরণ করে গত ২২ সেপ্টেম্বর এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। ব্রিটিশদের তৈরি ১৯১৮ সালের সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট ১৯৫২ সালে পরিবর্তিত হয়ে ‘ইস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব ফিল্ম সেন্সর’ নামকরণ হয়। নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, মানচিত্রের বদল ঘটলেও বিগত ৭২ বছরে চলচ্চিত্রকে শাসনের রীতি বদলায়নি। ২০২৩ সালের শেষে এসে বিগত সরকার সার্টিফিকেশন বোর্ড আইন পাশ করলেও সেটির বিধিগুলো তৈরি করতে পারেনি। অবশেষে ২০২৪ সালে এসে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে বিগত সরকারের পদক্ষেপটির বাস্তবায়ন ঘটে। তুলে নেওয়া হয় ‘সেন্সর’ শব্দটি।
যদিও বোর্ড সদস্যরা মনে করছেন সার্টিফিকেশনের আসল সুফল পেতে হলে বিধিগুলোকে তৈরি করতে হবে। সেই কাজটিই করছেন তারা। তবে এরজন্য খানিকটা সময় লাগবে। পাশাপাশি ছবি মুক্তিতে যেন বাধা না হয়, সে জন্য নিয়মিত সিনেমাও দেখে তারা ছাড়পত্রের ব্যবস্থা করছেন।
বলা দরকার, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেট আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩-এর উপ-ধারা (১) অনুযায়ী সেন্সর থেকে সার্টিফিকেশন বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, ১৫ সদস্য-বিশিষ্ট চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানকে বোর্ডের সদস্য সচিব করা হয়েছে।
বোর্ডের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব; প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র); জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার প্রতিনিধি; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি; ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক ড. জাকির হোসেন রাজু; চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক রফিকুল আনোয়ার রাসেল; চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, লেখক ও সংগঠক জাহিদ হোসেন; চলচ্চিত্র সম্পাদক ইকবাল এহসানুল কবির; চলচ্চিত্র পরিচালক খিজির হায়াত খান; চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক তাসমিয়া আফরিন মৌ।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য