মঞ্চে এসেছে নাট্যদল ‘দৃশ্যকাব্য’র নতুন প্রযোজনা ‘অতঃপর প্রণয়’। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ‘রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট’ অবলম্বনে এর রূপান্তর করেছেন রুমা মোদক এবং নির্দেশনায় এইচ এম মোতালেব।
২৬ ও ২৭ (ডিসেম্বর) ২০২৪ ইং তিনটি প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে, ২৬ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায়, ২৭ তারিখ বিকেল ৫:৩০ ও সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে নাটকটি।
নাটকের গল্পে দেখা যাবে, একই শহরে বসবাসকারী দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বী চৌধুরী পরিবার ও সৈয়দ পরিবার। এই দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বংশমর্যাদা, আভিজাত্য আর প্রভাব–প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব বিরাজমান। কিন্তু দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর ধর্মের বেড়াজালকে উপেক্ষা করে চৌধুরী পরিবারের মেয়ে জুঁই এবং সৈয়দ পরিবারের ছেলে রুম্মান দুজন দুজনার ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধা পড়ে। তাদের এই প্রেমকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের দুজন আকস্মিকভাবে খুন হয়। ফলে সেই খুনের প্রভাবে শহরজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির উপক্রম হয়।
অন্যদিকে শহরের এক ধনী ব্যবসায়ী পিয়ারী মহনের সঙ্গে জুঁইয়ের বিয়ের দিন ঠিক করা হয়। ফলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও জুঁই-রুম্মানের ভালোবাসার সম্পর্ককে অটুট রাখতে লোলিত কবিরাজের শরণাপন্ন হয় জুঁই।
লোলিত কবিরাজ এ সমস্যার সমাধান হিসেবে জুঁইকে এক বিশেষ ওষুধ দেয়, যা পান করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জুঁই অচেতন থাকবে, সবাই তাকে মৃত হিসেবে জানবে। পরে সে যখন চেতনা ফিরে পাবে, তখন রুম্মানের সঙ্গে তার বিবাহের ব্যবস্থা করবে। জুঁই কবিরাজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রাতে ওই বিশেষ ওষুধ পান করে এবং সকালে সবাই দেখে জুঁই ‘মারা’ গেছে। জুঁইয়ের মৃত্যুর খবর রুম্মানের কাছে পৌঁছায়। রুম্মান জুঁইকে একনজর দেখতে ছুটে আসে। প্রিয়তমার মৃত্যু মেনে নিতে পারায় রুম্মান আত্মহত্যা করে। তার কিছুক্ষণ পরই জুঁইয়ের চেতনা ফিরে আসে এবং সে দেখে রুম্মান মৃত। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য জুঁই এত কিছু করল, সেই মানুষটাই আজ নিহত। তাই জুঁইও আত্মহত্যা করে। আর এভাবেই দুটি নিষ্পাপ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এমন সব নানা নাটকীয় ঘটনা নিয়ে নাটক ‘অতঃপর প্রণয়’।
নির্দেশক এইচ এম মোতালেব বলেন, ‘গত বছর দৃশ্যকাব্যের চার মাসব্যাপী নাট্যকর্মশালায় নাটকটি শুরু করেছিলাম, কর্মশালায় বেশ কিছু সুন্দর তরুণ–তরুণী ছিল। আমার মনে হয়েছিল ওরা যে রকম, সেই রকম করে হাত–পা নাড়িয়ে প্রাণ খুলে স্পষ্ট করে সংলাপ বলতে পারলেই হয়ে যাবে। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি। তাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষ করতে পারিনি। ইতিমধ্যে নাটকটির মধ্যে আমি ডুবে গেছি।’ উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েট নাটকটি রুমা মোদক হবিগঞ্জ জেলার প্রেক্ষাপটে রূপান্তর করেছেন।
নাট্যকার রুমা মোদকের ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রোমিও জুলিয়েটের প্রেমকাহিনির অ্যাডাপ্টেশন। কোনো নিরীক্ষা করিনি, করতেও চাইনি কিন্তু করা যেত। চেয়েও ছিলাম।
কিন্তু রোমিও জুলিয়েটের ট্র্যাজিক প্রেমকাহিনি আমাকে বহু বছর ধরে এমনই আবিষ্ট করে রেখেছে যে যৈবতী কন্যার মন এখনো সচল হয়ে উঠে বয়সের বেড়া ডিঙিয়ে, এখনো রোমিও জুলিয়েট পাঠে আর্দ্র মন এখনো আফসোসে ডুবে মরে। আমি এই আর্দ্র আফসোস থেকে বের হতে পারি না। তাই লেখাতেও পারিনি।’
নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এইচ এম মোতালেব, মৌসুমী বেগম, রিমন সাহা, মাইমুনা আক্তার স্বর্না, মোঃ পিয়েল, আবির হোসেন আশিক, চিত্রা সাহা, আরিফ হোসেন প্রত্যয়, হীরা লাল দাস্ , মোঃ পারভেজ,অর্ঘ্য সাহা,উৎপল ভর্মন।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য