অঞ্জনার সব আশা ফুরাল

ইমরুল শাহেদ
অঞ্জনার সব আশা ফুরাল

‘অশিক্ষিত’ ছবির ‘ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে...’ গানটিতে ঠোঁট মেলানো অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান গত শুক্রবার মারা গেছেন। শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।

অঞ্জনা রহমান দুটি কন্যা সন্তান ফারজানা নিশি ও মনি নিশাতকে রেখে গেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন রাজধানীর ঢাকা ব্যাংক কোয়ার্টারে সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর। অঞ্জনা ছিলেন দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে একজন।

অঞ্জনার মৃত্যু সংবাদ জানাজানি হওয়ার পর গতকাল শনিবার সকালে তার শুভার্থী ও দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা এফডিসি চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। কাউকে কাউকে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে। অঞ্জনার লাশবাহী গাড়িটি প্রযোজক সমিতির অফিসের সামনে রাখা হয়। সেখানেই বাদ জোহর তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় চ্যানেল আই ভবনে। সেখানে তার দ্বিতীয় নামাজে জানাজা হয়। এরপর তাকে বনানী গোরস্থানে দাফন করা হয়।

জানা গেছে, তিন সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অঞ্জনা। শুরুতে জ্বর ছিল। সারা শরীর কেঁপে কেঁপে জ্বর আসতো। একটা সময় ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছিল না। পরে জানা যায়, তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরপর অঞ্জনাকে রাজধানীর বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসায় শারীরিক অবস্থার আশানুরূপ উন্নতি না হওয়ায় বুধবার তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থায়ও তার অবস্থার কখনো উন্নতি, কখনো অবনতি হচ্ছিল।

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী অঞ্জনা নৃত্যশিল্পী থেকে নায়িকা হয়ে সর্বাধিক যৌথ প্রযোজনা এবং বিদেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে অঞ্জনা অভিনীত ও একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ‘দস্যু বনহুর’। এ ছবির নায়ক ছিলেন সোহেল রানা। এ ছবির পর তাকে আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়নি। ৪৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন।

১৯৭৬ সালের সিনেমার পর টানা কাজ করেছেন অঞ্জনা। একে একে অভিনয় করেছেন ‘মাটির মায়া’, ‘অশিক্ষিত’, ‘চোখের মণি’, ‘সুখের সংসার’, ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’, ‘আনারকলি’, ‘বিচারপতি’, ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, ‘অভিযান’, ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, ‘বিস্ফোরণ’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘নাগিনা’, ‘পরিণীতা’ ইত্যাদি বাণিজ্যিক সফল সিনেমায়। বাংলাদেশ ছাড়াও তিনি ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আন্তর্জাতিক পুরস্কার, একাধিক জাতীয় স্বর্ণপদক ও বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন। নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক স্বীকৃতি। ‘পরিণীতা’ ও ‘গাঙচিল’-এ অভিনয়ের জন্য দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অঞ্জনা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে। তবে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য