সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে রোগী। চাপ বাড়ছে আইসিইউতেও। তবে তা রাজধানীর সব হাসপাতালে নয়। হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে। বেশি রোগীর চাপ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটে। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল ও হৃদরোগে খালি নেই আইসিইউ। মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) কুর্মিটোলায় খালি ছিল মাত্র একটি আইসিইউ। এছাড়া ঢাকার তিনটি হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় এখনো কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। একটিতে ভর্তি আছেন একজন।
রাজধানীর ১৫টি সরকারি হাসপাতালে করোনার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে উত্তরায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, ৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মহাখালীর ২৫০ শয্যা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়ায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল শ্যামলী, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল এবং জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)।
মহাখালীর ২৫০ শয্যা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল, ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল- এই হাসপাতালগুলোর মধ্যে সব শয্যা ফাঁকা রয়েছে। মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৫০টি শয্যার মধ্যে একটিতে রোগী ভর্তি আছে।
ফাঁকা থাকা এই তিন হাসপাতালে সাধারণ শয্যা রয়েছে ৭৮৮টি। এর মধ্যে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভারে ১৭৪টি, নিউরোসায়েন্সেসে ৬০টি এবং ডিএনসিসি হাসপাতালে ৫৫৪টি। এই তিনটির মধ্যে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে আইসিইউ নেই। অন্য দুটিতে ২২৮টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ডিএনসিসির ২১২টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৩১টিতে রোগী ভর্তি ছিল। ফাঁকা ছিল ১৮১টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, ২০ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত উত্তরায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ৬৪টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৪৮টিতে রোগী ভর্তি ছিল। খালি ছিল ১৬টি। ১৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ৮টি।
৫০০ শয্যা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ২৭৫ শয্যার মধ্যে ২১৬টিতেই রোগী ভর্তি ছিল। ১০টি আইসিইউর মধ্যে রোগী ছিল নয়টিতে। একটি খালি ছিল।
সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ২৩টি শয্যার মধ্যে ১০টিতে রোগী ছিল। খালি ২৩টি। চারটি আইসিইউর মধ্যে তিনটিতেই রোগী ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-২) ও বার্ন ইউনিটে ৪৮৫ শয্যার মধ্যে ৩৪০টিতে রোগী ছিল। খালি ছিল ১৪৫টি। এখানে ২০টি আইসিইউ শয্যার কোনোটিই ফাঁকা ছিল না। মুগদা মেডিকেলে ২৮৭ শয্যার মধ্যে রোগী ছিল ৬২টিতে। খালি ২২৫ শয্যা। ২৫টি আইসিইউর মধ্যে খালি ১৬টি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৫০ শয্যার মধ্যে ২৫টিতে রোগী ছিল। এখানে ১০টি আইসিইউ শয্যার ১০টিই খালি।
রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ৪৭০ শয্যার মধ্যে ১২৭টিতে রোগী ভর্তি। খালি ৩৪৩টি। ১৫টি আইসিইউর মধ্যে ১৩টি খালি ছিল।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ৪২টি শয্যার মধ্যে রোগী ছিল ১৭টিতে। আটটি আইসিইউ শয্যায়ই রোগী ছিল।
শ্যামলী টিবি হাসপাতালে ১৭ শয্যার মধ্যে সাতটিতে রোগী ছিল। চারটি আইসিইউ শয্যাই খালি ছিল। বিএসএমএমইউতে ৫৫১ শয্যার মধ্যে ৫৫টিতে রোগী ভর্তি ছিল। ৩৬টি আইসিইউর মধ্যে খালি ছিল ৩০টি। নিটোরে ৫০ শয্যার মধ্যে ২৩টিতে রোগী ছিল।
২৫ জানুয়ারি ৩১৬২ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ২২৩১ শয্যা। ৯৩১ টিতে রোগী ভর্তি ছিল। ৩৭৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে খালি ছিল ২৮২টি। ৯৪টিতে রোগী ছিল।
গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার ১৫টি হাসাপালে ভর্তি ছিল ৬২৯ জন। ২৫ আগস্ট ছিল ৯৩১ জন। রোগী বেড়েছে ৩০২ জন।
মঙ্গলবার বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, সংক্রমণ যখন বেশি হবে তখন মৃত্যুও বেশি হবে। রাজধানীতে সরকারি হাসপাতালগুলোর ২৫ শতাংশ শয্যা ভরে গেছে। এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে ধীরে ধীরে শয্যার চাহিদা বাড়বে।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা বলেছেন, সংক্রমণ কমাতে হলে সবার মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে যত কিছুই করা হোক না কেন কোনো লাভ হবে না।
মন্তব্য