-->
শিরোনাম
ওমিক্রন রোগীদের শারীরিক জটিলতা কম

অবনতিতেও বাড়ছে খালি শয্যা সংখ্যা

নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন
অবনতিতেও বাড়ছে খালি  শয্যা সংখ্যা

হাসপাতালে খালি হওয়া করোনা শয্যার সংখ্যা বেড়েছে। রোগী বাড়লে শয্যা সংকট হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশে ঘটছে বিপরীত ঘটনা। গত এক সপ্তাহে সারা দেশে মোট খালি হওয়া করোনা শয্যা ২ শতাংশ বেড়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পজিটিভ হওয়ার পরও শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি না ঘটলে হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা। এটি ভালো লক্ষণ হতে পারে না। সব করোনা রোগীর হাসপাতালে ভর্তি থাকার দরকার পড়ে না।

কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে হবে। খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে গেলে রোগীর দুর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মো. জাকির হোসেন খান জানান, ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৯২২টি ও খালি ১১ হাজার ৩৩৫টি এবং মোট শয্যার বিপরীতে খালি শয্যা ৮২ শতাংশ।

এদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৭। ২ ফেব্রুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮০টি ও খালি ১১ হাজার ২৭৩টি এবং খালি শয্যা ৮১ শতাংশ। এদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০৭।

১ ফেব্রুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০১টি ও খালি ১১ হাজার ১৭৯টি এবং খালি শয্যা ৮১ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ২ হাজার ৬২২ জন। ৩১ জানুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৮০১টি ও খালি ১১ হাজার ২৬০টি এবং খালি শয্যা ৮১ শতাংশ।

হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ২ হাজার ৫৪২ জন। ৩০ জানুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৬৭৮টি ও খালি ১১ হাজার ৮৯টি এবং খালি শয্যা ৮১ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ২ হাজার ৫৮৯ জন।

২৮ জানুয়ারি মোট কোভিড সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৪১৮টি ও খালি ১০ হাজার ৭৯৪টি এবং খালি শয্যা ৮০ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ২ হাজার ৬২৪।

ওমিক্রন রোগীদের শারীরিক জটিলতা কম : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু ভোরের আকাশকে বলেন, গত বছর আমরা ডেল্টার প্রভাব দেখেছি।

ডেল্টায় যেমন রোগীকে দ্রুত দুর্বল করে ফেলত, ফুসফুসেও ক্ষতি করত, ওমিক্রনে সেভাবে রোগী খুব একটা গুরুত্বর অসুস্থ হয় না। সেজন্য হাসপাতালে ভর্তির হারও কম।

তবে কোমরবিডিটি থাকা অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে এবং চিকিৎসক পরামর্শ দিলে হাসপাতালে যেতেই হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যা দেখা গেছে, সারা দেশে হাসপাতালগুলো কোভিড আইসিইউ শয্যার ৭৪ শতাংশ খালি রয়েছে। সারা দেশ ৩ ফেব্রুয়ারি করোনা আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ২৭৪টি ও খালি ৯৪১টি। ২ ফেব্রুয়ারি মোট করোনা আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৭৪টি ও খালি ৯৬১টি।

১ ফেব্রুয়ারি করোনা আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৮৩টি ও খালি ৯৫৫টি। ৩১ জানুয়ারি করোনা আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৭৪টি ও খালি ৯৪২টি। ৩০ জানুয়ারি মোট করোনা আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৮৪টি ও খালি ৯৭৭টি। ২৮ জানুয়ারি মোট করোনা আইসিইউ শয্যা ১ হাজার ২৯১টি ও খালি ৯৮০টি।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হবে- বিশেষজ্ঞরা :

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে যাচ্ছেন না করোনা রোগীরা। করোনার সাধারণ শয্যার প্রায় ৮২ শতাংশই খালি থাকছে। করোনা রোগীদের মধ্যে হাসপাতালে না যাওয়ার প্রবণতা অনেকগুণ বেড়েছে, কমেছে করোনা শনাক্তের মানসিকতা।

নিজেদের সুস্থ ভেবে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন উপসর্গহীন করোনা রোগীরা। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। সাধারণ মানুষের আচরণে মনে হবে দেশ থেকে যেন করোনা বিলীন হয়ে গেছে। সর্বত্র বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েই চলেছে।

এ অবস্থায় করোনা রোগীদের হাসপাতালবিমুখ হওয়া এবং উপসর্গহীন রোগীদের অবাধ বিচরণে দেশের করোনা পরিস্থতির চরম অবনতি ঘটবে। হাসপাতালের করোনা শয্যা খালি হওয়ার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পজিটিভ হওয়ার পরও শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি না ঘটলে হাসপাতালে যাচ্ছে না করোনা রোগীরা।

এটি ভালো লক্ষণ হতে পারে না। সব করোনা রোগীর হাসপাতালে ভর্তি থাকার দরকার পড়ে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হাসপাতালে যেতে হবে। খারাপ অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে গেলে রোগীর দুর্ঘটনায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তিনি আরো বলেন, হাসপতালে ভর্তি না থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে- সংক্রমণপ্রবণ হলেও ওমিক্রনে মৃত্যুহার কম, আক্রান্তদের অধিকাংশই শারীরিক জটিলতায় পড়েন না।

দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজস্টি ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের আকাশকে বলেন, প্রয়োজনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতেই হবে। এ বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। বাসায় চিকিৎসাধীন রোগীদের মনিটরিং করতে হবে।

করোনা পরীক্ষার পর যদি পজিটিভ রেজাল্ট আসে তবে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে। যার পজিটিভ তার সংস্পর্শে যারা আসবে, তাদের কোয়ারেন্টাইনে নিয়ে যেতে হবে। যাদের শরীরে শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য লক্ষণ থাকবে, তাদের অবশ্যই হাসপাতালে পাঠাতে হবে।

প্রয়োজনে অবশ্যই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে বলে জানান তিনি। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা শনাক্তরণ ও হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে উদাসীনতা ভালো লক্ষণ নয়।

অধিকাংশ রোগীরই হাসপাতালে যেতে হয় না। যারা বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তারা বাসায় থাকলেও একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। না হলে তারা বুঝতে পারবেন না, অবস্থার অবনতি হচ্ছে কিনা।

মন্তব্য

Beta version