-->
শিরোনাম

ওমিক্রন শেষ হতে পারে এ মাসে

আরিফ সাওন
ওমিক্রন শেষ হতে পারে এ মাসে
প্রতীকী ছবি

যেভাবে বাড়ছিল সেভাবেই কমছে করোনার সংক্রমণ। সাত দিনে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে। ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে সাত দিনে সংক্রমণ নেমে এসেছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো এ মাসেই শেষ হতে পারে ওমিক্রনের এই ঢেউ।

চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি থেকে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুরু হয়। পরে তা কখনো কখনো গুণিতক হারেও বাড়ে। ১২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারিÑ এই ১১ দিনে ১১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সংক্রমণ উঠে যায় ৩১ শতাংশে।

২৮ জানুয়ারি সংক্রমিত হয় ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশে। যা দেশে করোনা শুরুর পর থেকে এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হার।

২৯ জানুয়ারি থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। দুই দিন নেমে, এক দিন একটু উঠে তারপর থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। ৪ জানুয়ারি সংক্রমণের হার নেমেছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশে।

আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ যেভাবে দ্রুত গতিতে ওঠে, সেভাবেই দ্রুত গতিতে নামে। ওমিক্রন যেভাবে দ্রুত উঠেছে, সেভাবেই দ্রুত নামছে। এখনো অতটা স্পষ্ট বোঝা না গেলেও। আগামী সপ্তাহ থেকে স্পষ্টভাবে নিম্নমুখী প্রবণতা বোঝা যাবে। হয়তো এ মাসেই শেষ হবে ওমিক্রনের এই ঢেউ।

তিনি বলেন, ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি-কাশি হয়েছে। কিন্তু আমাদের তো সেভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। পরীক্ষা করা হলে আরো অনেক বেশি শনাক্ত হতো।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, জ্যামিতিক হারে যদি কমতে থাকে তাহলে পাঁচ শতাংশের নিচে আসতে হয়তো দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। এর মধ্যে যদি আবার কোনো নতুন ভ্যারিয়েন্ট চলে না আসে, তাহলে দুই থেকে তিন সপ্তাহে ওমিক্রনের এই ঢেউ নেমে যেতে পারে।

করোনা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্বে দেন এই বিশেষজ্ঞ।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের খবর জানায় দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ। ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর দেশে প্রথম দুইজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্তের খবর জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সেদিনও শনাক্তের হার ছিল দুই শতাংশের নিচে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, টানা দুই মাস এক থেকে দুই শতাংশের মধ্যে সংক্রমণ ওঠা-নামার পর ২১ সালের ১৮ ডিসেম্বর সংক্রমণ এক শতাংশের নিচে নামে; ০.৮৭ শতাংশে। পরদিন আবার সংক্রমণ এক শতাংশের উপরে উঠে যায়।

তারপর থেকে প্রতিদিনই সংক্রমণ বাড়তে থাকে। ছয় দিনের মাথায় দুই শতাংশের উপরে ওঠে ২৪ ডিসেম্বর; ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর ১৭ দিনে সংক্রমণ ওঠে পাঁচ শতাংশের ওপরে। ১৮ ডিসেম্বর শূন্য দশমিক ৮৭ থেকে ২০ দিনে ৭ জানুয়ারি সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের ওপরে ওঠে; ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে।

৭ জানুয়ারির পর থেকে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। পাঁচ দিনে ১২ জানুয়ারি সংক্রমণ উঠে যায় ১০ শতাংশের ওপরে; ১১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। তার পাঁচ দিনে ১৭ জানুয়ারি সংক্রমণ উঠে যায় ২০ শতাংশের ওপরে; ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর পাঁচ দিনের মাথায় ২৩ জানুয়ারি সংক্রমণ উঠে যায় ৩০ শতাংশের ওপরে; ৩১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করে সরকার বিধিনিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ রোধে ১০ জানুয়ারি ১১ নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। ১১ নির্দেশনার মধ্যে যা যা ছিল তা কোনোটারই দৃশ্যমান বাস্তবায়ন হয়নি।

গত ১২ থেকে ২৩ জানুয়ারি ১০ দিনের মাথায় ১১ থেকে সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশে ওঠায় কপালের ভাঁজ আরো বাড়তে থাকে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের। অনেকেরই ধারণা ছিল এবার সংক্রমণের হার উঠতে পারে ৫০ শতাংশে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীও বলেছিলেন এক মাস ওই হারে বাড়তে থাকলে হাসপাতালে রোগী রাখার জায়গা থাকবে না। কিন্তু সংক্রমণ বাড়লেও এবার মানুষ গুরুত্বর অসুস্থ না হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির হার ছিল একেবারেই কম।

২৩ জানুয়ারি ৩১ শতাংশের ওপরে ওঠে সংক্রমণ হার, ২৮ জানুয়ারি ৩৩ শতাংশের ওপরে ওঠে; ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। যা করোনা শুরুর পর দেশে সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার। এর আগে ২০২১ সালে সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার ওঠে ৩২ দশমিক ৫৫ শতাংশে।

২৯ জানুয়ারি থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। দুই দিন নেমে, এক দিন একটু উঠে তারপর থেকে টানা পাঁচ দিন ধরে সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। ২৯ জানুয়ারি সংক্রমণের হার নেমে ৩১ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। ৩০ জানুয়ারি নেমে আসে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশে। পরদিন আবার তা উঠে যায় ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশে। এই দিন ৩১ জানুয়ারির পর থেকে সংক্রমণ কমছে।

গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি টানা পাঁচ দিন সংক্রমণ নিম্নমুখী। প্রতিদিনই সংক্রমণের হার কমছে। ৩১ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল ২৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। সেদিন ১৩ হাজার ৫০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যায় ৩১ জন। গত ১ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার নামে ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। সেদিন ১৩ হাজার ১৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যায় ৩১ জন।

২ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার নামে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। সেদিন ১২ হাজার ১৯৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। মারা যায় ৩৬ জন।

৩ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার নেমেছে ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশে। শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ৫৯৬ জনের। মৃত্যু হয় ৩৩ জনের।

৪ ফেব্রুয়ারি সংক্রমণের হার নেমেছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশে। শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫২ জনের। মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। ৩৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে সাত দিনে সংক্রমণ নেমে এসেছে ২২ দশমিক ৯৫ শতাংশে। সাত দিনে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশে নেমে এসেছে।

মন্তব্য

Beta version