-->
শিরোনাম
করোনার টিকাদান শুরুর এক বছর

সফলতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ

নিখিল মানখিন ও আরিফ সাওন
সফলতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ
সীমিত সম্পদ ও আয়তনের বিপরীতে বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের এই সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী।

করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামাল দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সূচকে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, টিকাদান কর্মসূচি এবং সামাজিক সচেতনতামূলক কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্ব এবং দেশের মানুষের জোরালো অংশগ্রহণ সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

সীমিত সম্পদ ও আয়তনের বিপরীতে বিপুল জনসংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের এই সাফল্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশের সামনে রয়েছে অনেক উন্নত দেশ।

করোনা মহামারিতেও জীবন ও জীবিকা সচল রাখায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসজুড়ে অবনতি হওয়া দেশের করোনা পরিস্থিতির ইতোমধ্যে উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা হ্রাসের ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে রোগী শনাক্তকরণে সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। মোট করোনা রোগী শনাক্তকরণে সক্ষমতা দেখানোর বিবেচনায় পূর্বের ৪৮তম থেকে উন্নতি ঘটিয়ে সামনে ৪০তম স্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ।

মোট পরীক্ষিত নমুনা সংখ্যা বৃদ্ধির বিবেচনায় ছয় ধাপ সামনে ৫১তম স্থানে এসেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশ বিশ্বে মোট সুস্থতার ভিত্তিতে ছয় ধাপ এগিয়ে ৬০তম স্থানে রয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৬৭তম স্থানে।

মোট শনাক্তকৃত করোনা রোগী, রোগী শনাক্তকরণে সক্ষমতা এবং মোট সুস্থ হওয়া করোনা রোগীর সংখ্যার বিবেচনায় অবস্থান যত বেশি সামনে যাবে, তত বেশি উন্নতি বোঝাবে। মোট মৃতের সংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩২তম এবং দৈনিক মৃতের সংখ্যার ভিত্তিতে ৫১তম স্থানে রয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও মোট মৃতের সংখ্যা ২৮তম এবং দৈনিক মৃতের সংখ্যা ৪৫তম স্থানে ছিল। এখানে অবস্থান যত বেশি পেছনে যেতে থাকবে তত বেশি উন্নতি বোঝাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ভোরের আকাশকে বলেন, চীনে প্রথম করোনা শনাক্তের পর থেকে বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হওয়ার অনেক আগে থেকেই করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করে সরকার। জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে করোনায় মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনায় মোকাবিলায় সফলতার পেছনে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সেগুলোর সুশৃঙ্খল বাস্তবায়ন কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজে সব কিছু মনিটরিং করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম। করোনা সংক্রমণ রোধের পাশাপাশি আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে বৃদ্ধি করা হয়েছে জনবল, চিকিৎসক, উপকরণ ও চিকিৎসা অবকাঠামোর পরিধি। অথচ আয়তনের তুলনায় কম জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং অঢেল সম্পদ নিয়েও করোনা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশ।

তবে সরকারের দেওয়া ১১ দফা বিধি নিষেধ না মানলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

করোনার টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বিশ্ব 

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত নিজের দেশের করোনা টিকা কার্যক্রমে শতভাগ সফলতা পায়নি। অনেক উন্নত দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণকারীর হার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে পড়ে আছে।

দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ ও প্রদানে পিছিয়ে থাকা দেশের সংখ্যাও অনেক। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১শ’ জনের বেশি জনসংখ্যার ঘনত্ব নিয়ে বাংলাদেশ বেশ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১ম ডোজ নিয়েছেন ৯ কোটি ৯১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ জন। ২য় ডোজ নিয়েছেন ৬ কোটি ৫১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪৭ জন। ৩য় ডোজ নিয়েছেন ২০ লক্ষ ৭৮ হাজার ৫০৫ জন।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ

৭ ফেব্রুয়ারি জানুয়ারি দুপুরে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, মোট পরীক্ষিত নমুনার ভিত্তিতে শনাক্তের হার ও মোট মৃত্যু সংখ্যা ভারতে যথাক্রমে ৫. ৭০ শতাংশ ও ৫,০২৯০৫ জন, বাংলাদেশ শনাক্তের হার ১৪.৬২ শতাংশ ও ২৮,৫৮৯ জন, পাকিস্তানে ৩.২২ শতাংশ ও ২৯,৫১৬ জন, নেপালে ১৮.৩১ শতাংশ ও ১১,৮১৪ জন, শ্রীলঙ্কায় ১০ শতাংশ ও ১৫,৫৭৫ জন, ভুটানে ০.২২ শতাংশ ও ৩ জন, মালদ্বীপে ৭.১৬ শতাংশ ও ২৮৩ জন ।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

করোনা মোকাবিলার সফলতায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, টিকাদান কর্মসূচি এবং সামাজিক গতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক এই সূচক করে থাকে জাপানের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দেনিক নিক্কি এশিয়া। সম্প্রতি বিশ্বের ১২১টি দেশ ও অঞ্চলের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর চারটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করা হয়। এতে দেশগুলোর প্রাপ্ত স্কোর ০ থেকে ৯০-এর মধ্যে।

বাংলাদেশের অবস্থা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনাভাইরাস পরীক্ষা করানোর জন্য চলমান পরীক্ষাগারের সংখ্যা বেড়ে ৮৫৫টিতে উন্নীত হয়েছে। সারা দেশের ১৩৫টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড সাধারণ শয্যার সংখ্যা বেড়ে ১৩,৪৩৭টি, কোভিড আইসিইউ শয্যা ১২২৫টি, কোভিড এইচডিউ শয্যা ৭১৩টি, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ২০১৯টি, অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর ২৩৪৫টি ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১১৮টি হয়েছে।

অর্থনৈতিক সক্ষমতা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, করোনার মহামারির মধ্যেও জীবন ও জীবিকার সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্যোগকালেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ২২৭ ডলার।

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার বিস্তার 

করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে দেশের মজবুত ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। ঘরে বসেই করোনাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায়, তার পুরো গাইডলাইন তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেওয়া হয়েছে সেবা প্রদানকারীদের নাম ও মোবাইল নম্বরসমূহ।

বিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশের সাফল্য

করোনা মোকাবিলার জন্য গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের সফলতা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১শ’ জনের বেশি।

জনসংখ্যায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। সীমিত সম্পদ ও আয়তনের বিপরীতে বিপুল জনসংখ্যাকে নিয়ে বাংলাদেশের এই সাফল্যে ইতোমধ্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিশ্ববাসী।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক ডা. এএসএম আলমগীর ভোরের আকাশকে বলেন, নানা আলোচনার মাঝেও করোনা মোকাবিলায় অনেক কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পেরেছে বাংলাদেশ।

মন্তব্য

Beta version