-->
শিরোনাম

যে কারণে এখনো জানা যায়নি সেই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
যে কারণে এখনো জানা যায়নি সেই দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সংবাদ সম্মেলন

নাপা’র যে বোতলের ওষুধ সেবনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে, সেই বোতলের ওষুধের নমুনা পায়নি ওষুধ প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। তাদের দাবি, সেই ওষুধ পুলিশ নিয়ে আলামত হিসেবে সিআইডিতে পাঠিয়েছে। এছাড়া পুলিশ ময়নাতদন্ত করে ভিসেরা রিপোর্টের জন্যও নমুনা পাঠিয়েছে সিআইডিতে। তাই শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ কবে নাগাদ জানা যাবে তা নিশ্চিত নয়।

ওই ওষুধ না পেলেও যে দোকান থেকে নাপা সিরাপ কিনে শিশুদের সেবন করানো হয়েছিল সেই দোকান থেকে ৮ টি নাপা সিরাপ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তাতে তারা ক্ষতিকর কিছু পায়নি। 

গত ১০ মার্চ নাপা সিরাপ সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে এমন অভিযোগ ওঠে। এরপর এ ঘটনায় পৃথক কয়েকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

১২ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর প্যারাসিটামল ১২০ মিলিগ্রাম ও ৫ মিলিগ্রাম সিরাপের (ব্যাচ নং ৩২১১৩১২১, উৎপাদন তারিখ ১২/২০২১, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ১১/২০২৩) ওষুধ সারাদেশের পাইকারি ও খুচরা ফার্মেসি থেকে নমুনা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে ন্যাশনাল কন্ট্রোল ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন।

১৩ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ছয় সদস্যের তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে যায়। তারা দুই শিশুর বাবা-মা, চাচা ও দাদির সাক্ষাৎকার নেন।

ওইদিন ঘটনাস্থলে বসে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান এ ঘটনাকে ‘রহস্যজনক’ বলে জানিয়েছিলেন।

এর পরদিন ১৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে সংবাদ সম্মেলন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। যে বোতলের সিরাপ শিশু দুটিকে সেবন করানো হয়েছিল, তা পরীক্ষা না করার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইউসুফ বলেন, পুলিশ (সিআইডি) মামলার নমুনা হিসেবে সেটা নিয়ে গেছে। আমাদের দেয়নি। আমাদের দিলে আমরা তা পরীক্ষা করতে পারতাম।

শিশু দুটির মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, সিআইডির পরীক্ষার পর প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে, তারা নাপা সিরাপ খেয়েই মারা গেছে কি না। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে শিশু দুটি কেন মারা গেল।

সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, আশুগঞ্জের যে দোকান থেকে কেনা ওষুধ সেবনের পর শিশু দুটি মারা গেছে, সেই দোকান থেকে আটটি বোতল জব্দ করেন তারা। এছাড়া ডিপো থেকে আরও দুটি ব্যাচের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রোববার এসব নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়, এর ফল পাওয়া যায় সোমবার দুপুরের পর।

তিনি বলেন, আমরা এ পর্যন্ত তিনটা নমুনা পরীক্ষা করেছি। ড্রাগ টেস্টিং প্রপাইলিন গ্লাইকল আছে তবে ক্ষতিকারক উপাদান ডাইইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। মাঠ পর্যায় থেকে আরও যেসব নমুনা আসছে, সেগুলোও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেগুলোর ফলাফল পরে জানাব। কিন্তু, এখন পর্যন্ত আমরা যে পরীক্ষা করেছি, পরীক্ষায় মান সঠিক পেয়েছি।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ওষুধটি নিয়ে জনমনে যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেটাও তাদের সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে, অনাস্থা তৈরি হচ্ছে। এই অনাস্থা ভাঙার জন্যই সংবাদ সম্মেলন।

ঘটনার পর ঔষধ প্রশাসন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কাছে চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানতে চান।

কোম্পানিটির তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ওই ব্যাচে মোট ৮২ হাজার বোতল নাপা সিরাপ উৎপাদন করে সারাদেশে বাজারজাত করা হয়েছিল। আর কোথাও থেকে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।

মন্তব্য

Beta version