-->

করোনার ভয়াবহতা ভুলে যাচ্ছে মানুষ

নিখিল মানখিন
করোনার ভয়াবহতা ভুলে যাচ্ছে মানুষ
করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কথা ভুলে যেতে বসেছে দেশের মানুষ। সারা দেশে বিরাজ করছে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার গতি-প্রকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আসেনি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ভেরিয়েন্টের আসার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দেশের স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টি উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। নেই কার্যকর সরকারি নির্দেশনা। দেশের করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

করোনার আবির্ভাবের পূর্বের চিরচেনা পরিবেশে ফিরে গেছে বাংলাদেশ। গত দুই মাস ধরে দেশের করোনার পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার অনেকটা সহনীয় ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কয়েক দিন পর পরই করোনায় মৃত্যুহীন দিন পার করছে দেশ। দৈনিক শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে এবং আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা থাকছে একশ’র কম।

করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত ১১ মার্চ রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে নার্সিং পরীক্ষা পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে; এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে; সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ‘করোনা ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণা দেওয়ার সময় আসেনি বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি পালন নয়, ভাঙার প্রতিযোগিতার চিত্রই বেশি ফুটে উঠেছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় কাওরান বাজারের খুচরা ও পাইকারি বাজারে দাঁড়ানোর ফাঁকা জায়গা ছিল। শারীরিক দূরত্ব তো দূরের কথা, মাস্ক পরা মানুষের খোঁজ পাওয়াই কঠিন।

মাস্ক পরার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিতেই হেসে উঠলেন চা দোকানদার মো. সালাম। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, করোনার কথা আর বলবেন না। করোনার দিন শেষ। প্রতিদিন দোকানে অসংখ্য মানুষ আসে, যায়। করোনায় আক্রান্ত হতে শুনি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি পালন করলে আমার দোকান চলবে না বলে জানান মো. সালাম।

ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে হাঁটার জায়গা নেই মাছের বাজারে। দামাদামি করতে গিয়ে লেগে যাচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতার মুখ। কথা বলার সময় বিনিময় হচ্ছে উভয়ের শ্বাস-প্রশ্বাস। এক ক্রেতা আরেক ক্রেতাকে ঠেলে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছে। মাস্ক পরার কথা তুলতেই ক্ষেপে গেলেন বিক্রেতা। নাম জিজ্ঞেস করার সুযোগ ও পরিবেশ কোনোটাই পেলাম না।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল এগারটা। তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড়। যাত্রীরা হুমড়ি খেয়ে উঠছেন বিজয় পরিবহণে। বাসের মাঝখানের খালি অংশটুকুও যাত্রীতে কানায় কানায় পূর্ণ। কয়েকজনের মুখে মাস্ক। বাসের ভেতরেও মাস্কবিহীন যাত্রীদের জায়গা ধরে রাখার তুমুল যুদ্ধ। দাঁড়িয়ে থাকা ও সিটে বসে থাকা যাত্রীদের মুখের দূরত্ব থাকার কোনো পরিবেশ নেই। এভাবে নগরীর কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে করোনার মহামারি অব্যাহত রয়েছে। সারাবিশ্বে এখনো করোনায় দৈনিক এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার লাভ ঘটতে তেমন সময় লাগে না। দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকলেও পুনরায় অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ বলে জানান ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

করোনা প্রতিরোধের জন্য গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, করোনার গতি-প্রকৃতি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আসেনি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ভেরিয়েন্টের আসার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দেশের স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টি উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, গত দুই বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতির ঘটনা ঘটছে। করোনার কয়েকটি ধরন ও তাদের গতি প্রকৃতি প্রত্যক্ষ করেছি। আগাম জানান দিয়ে নতুন ধরনের আগাম ঘটবে না। নতুন ধরনের সংক্রমণ শুরু হলে তা সারা দেশে ছড়াতেও বেশি সময় লাগে না। প্রস্তুতি ও সতর্ক না থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই বলে জানান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।

মন্তব্য

Beta version