-->
শিরোনাম

করোনা কেড়েছে ঘুম, কমেছে স্মৃতিশক্তি

আরিফ সাওন
করোনা কেড়েছে ঘুম, কমেছে স্মৃতিশক্তি
প্রতীকী ছবি

গত বছর হঠাৎ করে অসুস্থ হন মো. মুনির হোসেন। গলাব্যথা, খাবারে ঘ্রাণ পাচ্ছিলেন না। করোনা হলো কিনা, সেই সন্দেহ হওয়ায় তিনি পরীক্ষা করান। পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। এরপর চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ সেবন করেন। কয়েকদিনে তিনি সুস্থ হয়ে যান। আবার করোনা পরীক্ষা করান।

তখন নেগেটিভ আসে। করোনা আক্রান্ত হন মুনির হোসেন, কয়েকদিন পর নেগেটিভ আসে। ধরে নিলেন সুস্থ হয়ে গেছেন। কিন্তু এরপর লক্ষ করলেন রাতে ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না।

কিছুদিন পর ফের আরেকটি বিষয় লক্ষ করলেন, তিনি মাঝে মাঝে ভুলে যাচ্ছে। একটা বিষয় মনে করতে চাইছেন, কিন্তু মনে আসছে না।

কারো যদি দীর্ঘদিন ঘুম না হয়, তাহলে স্মৃতিশক্তির ওপর প্রভাব ফেলবে। তাই এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ তাদের।

অ্যাসোসিয়েশন অব সার্জনস ফর স্লিপ অ্যাপনিয়া, বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু বলেন, ‘করোনা পরে অনেকের ঘুম কমেছে।

ঘুম কমে যাওয়ার কারণে আমরা অনেকে অনেক কিছু মেমোরাইজ করতে পারি না। এটাকে বলা হয় ব্রেইন ফগিং। অর্থাৎ ব্রেইনে যে চিন্তাভাবনা, মেমোরাইজ করার ক্ষমতা এটা ধোঁয়াটে হয়ে আসে। দ্যাট ব্রেইন ফগ ইজ লাইক এ প্যান্ডেমিক ওল ওভার দ্য ওয়াল্ড নাউ।

করোনা আগে ৪৫ শতাংশ মানুষের ঘুমের সমস্যা ছিল। এখন এটা ৭৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। পোস্ট করোনা যে ঘুমের সমস্যা, এটা কিন্তু প্রচুর লোক আমরা সাফার করি।’তিনি বলেন, ‘এখন বিশ্ব তিনটি প্যান্ডেমিক চলছে। এর মধ্যে একটি ঘুমের সমস্যা।

গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে আছে, কিছু বিষয়ে ওপর রেকর্ড করা যাবে না। তার মধ্যে ঘুম একটি। না ঘুমিয়ে থাকারা ওপর রেকর্ড করা যাবে না। কারণ কয়েক বছর আগে না ঘুমিয়ে থাকার ওপর বিশ্বরেকর্ড করতে গেছিলেন একজন অমেরিকান সংগীতশিল্পী।

টাইম স্কায়ারে চার দিন তিনি বসে ছিলেন, যে ঘুমাবেন না। চতুর্থ দিনে আর ব্রেইন টোটালি এবনরমাল হয়ে যায়। তারপর কখনোই আর তাকে স্বাভাবিক করা যায়নি।’

আয়ারল্যান্ডে ববিসেনস এমপির নেতৃত্বে একবার অনশন করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের ওপর স্টাডি করে দেখা গেছে, ৬-৭ জন মারা যান, তারা এভারেজ ৬৩ থেকে ৭৭ দিন বেঁচেছিলেন। কাজেই না ঘুমিয়ে থাকলে আপনি বাঁচতে পারবেন ১১ দিন।

আর না খেয়ে থাকলে আপনি বাঁচতে পারবেন আপ টু ৭৭ দিন। সুতারাং ঘুম বেশি গুরুত্ব পূর্ণ। তাই একজন মানুষকে ২৪ ঘণ্টায় ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।’

দেশে এ পর্যন্ত ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৬৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ১২২ জনের। সুস্থ হয়েছেন ১৮ লাখ ৮২ হাজার ১৯৭ জন।

করোনার কারণে কী পরিমাণ মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা নিয়ে এখনো ওইভাবে কোনো জরিপ বা স্টাডি নেই। স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার বিষয়টা এমন যে পুরোপুরি ভুলে যাচ্ছে না।

ভুলেও যাচ্ছে না, আবার মনেও করতে পারছে না। এটাকে বলা হয় ইন্টালেকচুয়াল ক্লাউডিং। ডা. মনিলাল বলেন, ‘আপনি কীভাবে বুঝেবেন আপনার ব্রেইন ফগিং হচ্ছে। আপনি দেখবেন, যে কাজটি যখন আপনার করা দরকার, আপনি মনে করতে পারছেন না।

আপনি কোনো বস্তু কোথাও রাখছেন সেটি মনে করতে পারছেন না। তখন আপনি বুঝবেন যে আপনার মেমোরিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ইউ আর সাফারিং ফ্রম ব্রেইন ফগিং।’

প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, চেষ্টা করা ঘুম যাতে ঘুমটা সুন্দর হয়। ঘুম সুন্দর হলে মনটা শান্ত থাকে, কাজ করতে সুবিধা হবে।

ঘুম না হলে অনেক রকম জটিললতা হয়, বøাডপ্রেশার বাড়ে, হার্টের রোগ হয়, ব্রেইনের অনেক ধরনের সমস্যা হয়। ডিমেনশিয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে ছোট বাচ্চাদের সমস্যা হয়।

ভালো সুন্দর ঘুম যাতে হয় সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সেজন্য সময় অনুযায়ী ঘুমাতে হবে। ইচ্ছেমতো ঘুমালে হবে না। দিনে ঘুমালাম, রাতে ঘুমালাম নাÑ এমন না, সময় হিসেব করে।

যাতে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন হয়। মানুষের জন্য এটা আসলেই ভালো, খুবই দরকার।

মন্তব্য

Beta version