-->
শিরোনাম
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ডা. ফাতেমা

পদত্যাগের পরও চাকরিতে বহাল, সঙ্গে পদোন্নতিও

* আইন অনুযায়ী সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আর থাকার সুযোগ নেই: বিএমএ মহাসচিব

এম বদি-উজ-জামান
পদত্যাগের পরও চাকরিতে বহাল, সঙ্গে পদোন্নতিও
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। সংগৃহীত ছবি

১০ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পরও বহাল তবিয়তেই আছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সাবেক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাতেমা দোজা। শুধুই সরকারি চাকরিতে বহাল থাকা নয়, তার বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্তে নেমেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে চার মাস ধরে চলমান তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো জবাব দেননি ডা. ফাতেমা দোজা। জবাব দাখিলে ডা. ফাতেমা দোজা সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. ফাতেমা দোজার মোবাইল ফোনে একাধিকার কল করলেও তিনি ধরেননি। এমনকি এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

সরকারি চাকরি থেকে একবার লিখিতভাবে অব্যাহতি নেওয়ার পর স্বপদে চাকরিতে বহাল থাকা এবং পদোন্নতির সুযোগ আছে কিনা সে বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা জানতে চাইলে চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক ভোরের আকাশকে বলেন, সরকারি হাসপাতালের একজন মেডিকেল অফিসার চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়ার পর তার আর সরকারি চাকরিতে ফেরার সুযোগ নেই। চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পর সেই তথ্য গোপন করে কেউ যদি স্বপদে বহাল থাকেন, তবে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি হবে। তবে কোনো চিকিৎসক যদি লিয়েনে যান তাহলে নির্ধারিত সময়ের পরে তার চাকরিতে স্বপদে ফিরতে আইনগত কোনো বাধা নেই।

সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, ডা. ফাতেমা দোজা জবাব দাখিলের জন্য ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় নিয়েছেন।

জানা যায়, সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরও চাকরিতে বহাল থাকা ও তথ্য গোপন করে পদোন্নতি নেওয়ার বিষয়ে ডা. ফাতেমা দোজার বিরুদ্ধে গতবছর ১২ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) একজন চিকিৎসক। তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রবা-১ অধিশাখায় সংযুক্ত) মিনা মাসুদ উজ্জামানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওই আদেশে অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিদিন দিতে বলা হয় তদন্ত কর্মকর্তাকে। এরপর স্বপক্ষে থাকা কাগজপত্রসহ লিখিত জবাব দিতে ডা. ফাতেমা দোজাকে চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা।

চিঠি পেয়ে ডা. ফাতেমা দোজা গত ১০ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তার সামনে স্বশরীরে হাজির হয়ে সময় নেন। তদন্ত কর্মকর্তা তাকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে জবাব না দেওয়ায় তাকে ২৩ জানুয়ারির মধ্যে জবাব দাখিল করতে আবারো চিঠি দেন তদন্ত কর্মকর্তা। ওই তারিখেও ডা. ফাতেমা দোজা উপস্থিত হননি এবং লিখিত জবাবও দাখিল করেননি। এ অবস্থায় মিনা মাসুদ উজ্জামানকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এ কারণে তিনি ফাতেমা দোজার নথি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে দেন। তাতে বলা হয়, কাগজপত্র দাখিল না করায় তিনি তদন্ত সম্পন্ন করতে পারেননি।

পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ হেলাল হোসেনকে নতুন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি ডা. ফাতেমা দোজাকে প্রমাণাদিসহ তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে গত ২৯ মার্চ চিঠি দেন উপসচিব উম্মে হাবিব। ওই চিঠিতে ডা. ফাতেমা দোজাকে প্রমাণাদিসহ ৫ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হতে বলা হয়। জানা যায়, এরপর এই তদন্ত কর্মকর্তার সামনে হাজির হয়ে ডা. ফাতেমা দোজা দুই সপ্তাহ সময় নন। তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ হেলাল হোসেন জানান, তাকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।

নথিপত্রে দেখা যায়, ডা. ফাতেমা দোজা বিএসএমএমইউতে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউ’র তখনকার রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরে দেওয়া ওই নিয়োগপত্রে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে যোগদান করতে বলা হয়। এই নিয়োগপত্র পাওয়ার দুই দিন পর ওই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি ডা. ফাতেমা দোজা হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের মেডিকেল অফিসার পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে স্বাস্থ্য সচিবের কাছে আবেদন করেন।

ডা. ফাতেমা দোজার অব্যাহতি চেয়ে আবেদনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দেন হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ আল সাফী মজুমদার। এরপর ডা. ফাতেমা দোজা বিএসএমএমইউতে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। তিনি সেখানে নির্ধারিত ছয় মাস চাকরি করেন। নির্ধারিত ছয় মাস পর ডা. ফাতেমা দোজার চাকরি স্থায়ী করেনি বিএসএমএমইউ।

এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ডা. ফাতেমা দোজাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে। একইসঙ্গে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পদায়ন করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন দেখে আশ্চর্য হন বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা। এরপরও ওই প্রজ্ঞাপনের আলোকে পরদিন ১১ জুন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে (শূন্যপদ) যোগদান করেন।

জানা যায়, ডা. ফাতেমা দোজা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর ১৮তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯৯ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০২ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৭ সালে তাকে বদলি করা হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। সেই থেকে তিনি সেখানে কর্মরত।

মন্তব্য

Beta version