করোনার চতুর্থ ঢেউ এলেও তা তীব্রতর হওয়ার শঙ্কা কম বলে মনে করছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ের ঝুঁকি আছে। তবে সেই ঢেউ শুরু হলেও তা আগের ঢেউগুলোর তুলনায় তীব্র বা প্রবল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে প্রস্তুতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। মেনে চলতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। যতক্ষণ সংক্রমণ, ততক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাসের চতুর্থ ঢেউয়ের ঝুঁকিমুক্ত হতে পারেনি বিশ্ব। কমে গিয়ে বিশ্বের অনেক দেশে ফের বেড়েছে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার। বিশ্বে দৈনিক সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং করোনায় মারা যাচ্ছেন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার করোনা রোগী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং কোথাও কোথাও ভাইরাসটির নতুন ধরন শনাক্ত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে নানাভাবে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে কয়েকদিন আগে করোনাবিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি ছয় দফা সুপারিশ করেছে। আর গত রোববার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন।
বুধবার রাজধানীর আমেরিকান সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থার (সিডিসি) সিডিসির কান্ট্রি ডিরেক্টর নিলি কায়দোস ড্যানিয়েল বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ের ঝুঁকি আছে। তবে সেই ঢেউ শুরু হলেও তা আগের ঢেউগুলোর তুলনায় তীব্র বা প্রবল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ইতোমধ্যে বহু মানুষের দেহে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। এ ছাড়া বহু মানুষ ইতোমধ্যে করোনার টিকা পেয়েছেন। সে কারণে মহামারির চতুর্থ ঢেউ এলেও তা তীব্রতর হওয়ার শঙ্কা কম। তবে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় থাকতে হবে সব ধরনের প্রস্তুতি।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন ভোরের আকাশকে বলেন, বর্তমানে দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ কমে গিয়েছিল, ওই সব দেশে আবার বাড়তে শুরু করেছে। সাধারণত সব দেশেই তিন মাস পর পর করোনার ঢেউ দেখা যায়। আমাদের দেশেও আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে করোনর চতুর্থ ঢেউ আসার শঙ্কা থাকে। করোনার নতুন কোনো ধরনের কারণেও সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে পারে। তবে যত দিন করোনার সংক্রমণ অব্যাহত থাকবে, ততদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান ডা. মুশতাক হোসেন।
করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আগমন নিয়ে ভাবার চেয়ে তা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে চিন্তা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ। তিনি বলেন, যতক্ষণ সংক্রমণ, ততক্ষণ সতর্ক থাকতে হবে। করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের আগমন নিয়ে নানা শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আসার সময় ও পরিবেশ হলে তা অবশ্যই আসবে। তা ঠেকানো খুবই কঠিন। চতুর্থ ঢেউয়ের প্রাদুর্ভাব কেমন হবে তা আগে থেকে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু এটা বলতে পারি যে, মোকাবিলার প্রস্তুতি ও সতর্কতা থাকলে ক্ষয়-ক্ষতির মাত্রা কম হবে। আগের ঢেউগুলো মোকাবিলায় ব্যাপক সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ। সবার মধ্যে সচেতনতা কাজ করলে সামনের ঢেউগুলোও সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারব বলে জানান ডা. এম এ আজিজ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, চতুর্থ ঢেউ আসার বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারব না। তবে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সতর্ক থাকলে নতুন নতুন ঢেউ এলেও বড় ধরনের আঘাত হানতে পারবে না।
মন্তব্য