ঈদের ছুটিতেও বিশেষ ব্যবস্থায় চালু ছিল সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা পেয়েছে রোগীরা। ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসাসেবায় তৈরি করা হয় বিশেষ মেডিকেল টিম। বহির্বিভাগেও সীমিত পরিসরে রোগী দেখার ব্যবস্থা ছিল। খোলা ছিল জরুরি বিভাগ ও অপারেশন থিয়েটার। ভর্তি করানো হয় নতুন রোগী। প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক রোস্টার তৈরি করা হয়। চিকিৎসাসেবা তদারকি করে বিশেষ টিম। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল সরেজমিনে ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ভোরের আকাশকে বলেন, ঈদের ছুটির দিনগুলোতেও সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা চালু ছিল। সরকারি হাসপাতালে রোগী সেবা নির্বিঘœ রাখতে চিকিৎসকদের ঈদের আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেননি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মহাপরিচালক আরো জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ঈদের অনেক আগেই দেশের প্রত্যেক সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া প্রতিটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী রোস্টার তৈরি করতে দেওয়া হয় বিশেষ নির্দেশনা। ঈদের আগের ৩ দিন এবং ঈদসহ পরের ৪ দিন জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকল্পে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রয়োজনীয় ওষুধ, ডাক্তার, নার্স ও সুসজ্জিত অ্যাম্বুলেন্স এবং মেডিকেল টিম নিয়োজিতকরণসহ প্রাথমিক চিকিৎসার পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে ঈদের ছুটিতে অন্য বছরের তুলনায় ব্যতিক্রম ও প্রত্যাশিত ভালো চিকিৎসাসেবা লক্ষ করা গেছে বলে জানান মহাপরিচালক।
ঈদের ছুটির দিলগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে ব্যতিক্রম ও স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা পেয়েছে রোগীরা। প্রতি বছরই ছুটির দিনগুলোতে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
চিকিৎসক ও নার্সের অনুপস্থিতি এবং চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল ঘুরে এবার দেখা গেছে ব্যতিক্রম চিত্র। নগরীর সব হাসপাতালেই পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও নার্সের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা ছিল সীমিত পরিসরে।
ঈদের ছুটিতেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন নতুন রোগী চিকিৎসা নিতে যান। তাদের একজন হলেন মো. রশিদ মিয়া। খিলক্ষেত থাকেন তিনি। তার ডান পা ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে ভর্তি হওয়ার অনুমতি পেয়েছেন।
তার ভাই গিয়াসদ্দিন ভোরের আকাশকে জানান, চিকিৎসাসেবা পেতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরই ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান মো. গিয়াসউদ্দিন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়েও চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে বহির্বিভাগে বেশি রোগী দেখা যায়নি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদের ছুটিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সামান্য পরিবর্তন আসে।
তবে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকে। স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথক পৃথক রোস্টার তৈরি করা হয়। অপারেশন থিয়েটার চালু থাকে। বিশেষ টিম চিকিৎসাসেবা তদারকি করে। ঈদে কিছুসংখ্যক চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে যেতে পারেন। কিন্তু এমন অবস্থার প্রেক্ষিতেই চিকিৎসাসেবার কৌশল সাজানো হয়েছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকে। তবে হাসপাতালে আগত নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল কম। ঈদের আগেই চিকিৎসাধীন অনেক রোগীকে ছাড় দেওয়া হয়। ওয়ার্ডগুলোতে রোগীর সংখ্যাও কম ছিল। চিকিৎসক ও নার্সের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়। তবে ছুটির দিনগুলোতে অপারেশনের তালিকা সীমিত করা হয়। ডি-ব্লকের ১৬ তলায় মেডিসিন বিভাগে পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন রাজধানীর বাড্ডাবাসী ফিরোজ আহমেদ।
ভোরের আকাশকে তিনি জানান, চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা দিচ্ছেন। তবে হাসপাতালে প্যাথলজিসহ অন্যান্য মেডিকেল পরীক্ষাগুলো বন্ধ থাকায় একটু অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান ফিরোজ আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ব্লকে গিয়েও চিকিৎসাসেবার সন্তোষজনক চিত্র পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ ভোরের আকাশকে জানান, স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা চালু রাখার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিছুসংখ্যক চিকিৎসক ছুটিতে গেলেও চিকিৎসাসেবায় এর প্রভাব পড়েনি। ছুটির দিনে দুই-এক দিনের জন্য বহির্বিভাগ বন্ধ থাকে। অপারেশন থিয়েটার সার্বক্ষণিক খোলা ছিল বলে জানান অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দীন আহমেদ।
শেরেবাংলা নগরের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালেও ঈদের আগে চিকিৎসাধীন অনেক রোগীকে ছুটি দেওয়া হয়। হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যাও কম ছিল। বহির্বিভাগে ভিড় ছিল না বললেই চলে। জরুরি বিভাগে রোগী আসতে দেখা গেছে। চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের অভিভাবকরা জানান, ছুটিতে চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা কম থাকে। তবে চিকিৎসাসেবা তেমন ব্যাহত হয় না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা কমে যায়। চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা একটু কম হলেও রোস্টার তৈরি করার কারণে চিকিৎসাধীন রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়নি।
তবে বহির্বিভাগে বেশি রোগী দেখা হয়নি। এ ছাড়া হাসপাতালের অন্য সব কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এভাবে রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হওয়ার বড় ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য