'গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
'গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখছেন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটামিন-১২, আয়রন এই পিপিআই ব্যবহারের ফলে ’ডিফিসিয়েন্ট’ হচ্ছে। তাই বলে এসব রোগের ভয়ে হঠাৎ করে পিপিআই বন্ধ করা যাবে না। পিপিআই ক্রমে দুই সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে কমিয়ে দিতে হয়ে। দিনে একটি, দুদিন পরে আরেকটি করে ওষুধ দেয়া যেতে পারে। আমরা যদি ’ডিসিপ্লিন’ভাবে চলাফেরা করি তাতেও এসিডিটি হবে না। এসিডিটি না হলে ওষুধ খাওয়া লাগবে না। একটি রোগের জন্য ওষুধ খেলে আরেকটি রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

রোববার (২২ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে 'Overuse of PPI: A review of emerging concern’ শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর (Proton-pump inhibitor) হচ্ছে এমন ধরনের ওষুধ যার প্রধান কাজ হলো-পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে এসিড নিঃসরণ কমানো।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, আমরা দেখছি বাংলাদেশের মানুষ রাস্তাঘাটে পণ্যের মতো ওষুধ কিনে থাকে। অনেকে আবার ফার্মাসিতে গিয়ে দামী ওষুধ কিনে থাকেন। এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ফলে আমরা এন্টিবায়োটিক খেয়ে যে অবস্থায় রয়েছি তাতে দেশে ২০৫০ সালের মধ্যে এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে করোনা ভাইরাসের চেয়ে বেশী লোক মারা যাবে। আমাদের অনেকে যখন-তখন স্টোরয়েড কিনে খাই। স্টোরয়েড খেয়ে মোটা তাজা হই। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ খারাপ।

করোনাভাইরাসের প্রকোপের সময়ের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানান বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজীবুল আলম বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের বড় অংশ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া। রোগীর একটু পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিলে ফার্মেসি দোকানীরা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে একটু পানি পান করালে বা হালকা কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে সমস্যা সমাধান করা যেত। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থাপনাপত্র ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্মৃতিভ্রমের মতো ঘটনা ঘটতে পারে এমনকি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে আসতে পারে।

তিনি বলেন, রোগীর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপনা লিখতে হবে কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অতিমাত্রায় এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার কমাতে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানান এই বিশেষজ্ঞ।

তিনি আরো বলেন, ইউএসএ ও ইউকেতে যখন ইচ্ছা তখন ওষুধ বিক্রি এবং কেনা সম্ভব নয়। বছরে তিনবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে পারবেন। কারণ ওখানে সবকিছু রেকর্ড থাকে আর এর বিল পে করে কোনো বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন-গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু কান্তি সিনহা।

নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

মন্তব্য