-->
শিরোনাম
করোনা

করোনা প্রতিরোধে নেই সরকারি তৎপরতা!

# দৈনিক শনাক্ত ছয় শতাংশ # প্রতিরোধ কার্যক্রম নেই # অনেক দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে # স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নাই

নিখিল মানখিন
করোনা প্রতিরোধে নেই সরকারি তৎপরতা!
প্রতিকী ছবি।

দেশে গত তিন সপ্তাহ ধরে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। দৈনিক নতুন করোনা রোগী শনাক্ত একলাফে ছয় শতাংশে উঠে গেছে। অনেক আগেই উঠে গেছে সরকারি বিধিনিষেধ ও নির্দেশনাসমূহের কার্যকারিতা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি এখন নির্ভর করছে মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপর।

স্বাস্থ্যবিধি পালনে কাউকে কিছু বলার কেউ নেই। দেশে করোনাময় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সরকারি মনিটরিং সচল রাখা উচিত বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সপ্তাহের বেশির ভাগ দিন করোনায় মৃত্যুহীন দিন পার করছে দেশ। কিন্তু দৈনিক নতুন রোগী শনাক্তের ঊর্ধগতিতে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে দেশবাসী।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবহেলা করা ঠিক হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সরকারকেই এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের পূর্বের অবস্থায় চলে গেছে দেশের মানুষের চলাফেরা। একদিকে নেই সরকারি নির্দেশনাসমূহের কার্যকারিতা, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশ বড় বিপদে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসা ও টিকাদান ছাড়া করোনা মোকাবিলায় সরকারি কর্মসূচি যেন হারিয়ে গেছে। সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি সরকারি নজরদারিতে নেই। করোনা রোগী শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহের পরিধিও সংকুচিত করেছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি পালনসহ সরকারি নির্দেশনাসূহ অনেক আগেই কার্যকারিতা হারিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শুধু শপিংমল নয়, জনসমাগম হয় এমন স্থান, হাসপাতাল, গণপরিবহণ সবখানেই যেন স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে! ফলে স্বাভাবিকভাবেই সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। লঞ্চ এবং ফেরিতে স্বাভাবিক সময়ের মতোই গাদাগাদি করে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার এবং দূরত্ব রেখে যাত্রীদের বহনের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাস্ক পরার আগ্রহও নেই। সরকারি-বেসরকারি অফিসেও ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি না মানার বিষয়টি সামনে আসছে। কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিয়ে, জন্মদিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান; যেখানে স্বল্প জায়গায় মিলন ঘটছে বিপুল সংখ্যক মানুষের।

সমুদ্র সৈকত ও পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। অর্থাৎ সারাদেশে চলছে স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার প্রতিযোগিতা। আর সামনে রয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। নামবে ঘরমুখো মানুষের ঢল। বেড়ে যাবে সংক্রমণের মাত্রা।

সম্প্রতি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে গত কয়েকদিন ধরে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ঊর্ধমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কোভিড এখনো নির্মূল হয়নি।

এখন স্বাভাবিক অবস্থায় থাকলেও করোনা যেকোনো সময় অস্বাভাবিক হতে পারে। ইতোমধ্যে মন্ত্রীসহ অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। এখন সবাইকে আগের মতো স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে, অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ ভোরের আকাশকে বলেন, বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বিশ্বের অনেকে দেশে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বিশ্বে এখনো করোনায় দৈনিক ২ থেকে ৩ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটছে।

তাই করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে অবহেলা করা ঠিক হবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানা, না মানার বিষয়টি সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে যাবে না। সরকারকেই এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পূর্বের অবস্থায় চলে গেছে দেশের মানুষের চলাফেরা।

একদিকে নেই সরকারি নির্দেশনা, অন্যদিকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের বিষয়টি ভুলে যেতে বসেছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণের হার হঠাৎ বেড়ে গেলে দেশ বড় বিপদে পড়বে বলে সতর্ক করেছেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদেও (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ভোরের আকাশকে বলেন, নতুন ভেরিয়েন্ট যাতে আমাদের দেশে ভয়াবহ রূপ নিতে না পাওে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি অবগত আছি। তাই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনা বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারবে না। সাধারণ মানুষের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিলে হবে না, সরকারিভাবে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়টি সচল রাখা উচিত বলে মনে করেন ইকবাল আর্সলান।

মন্তব্য

Beta version